নভেরা হোসেন
মুখোশ
শো শো বাতাস বইছে । সারাদিনের কড়া রোদের পর চারদিক থেকে ঝড়ো হাওয়া ছুটে এল। শাহবাগের রোড -লাইটগুলো জ্বলতে শুরু করেছে, পাবলিক লাইব্রেরিতে অনেক লোক, তাদের চোখে -মুখে আনন্দ চিহ্ন, মুখে উৎসবের রং মেখে ঘুরছে সবাই। তুমি কাউকে চিনতে পারছ না, সবার মুখে একই ধরণের মুখোশ, হলুদের মধ্যে কালো ডোরাকাটা, মাথায় ময়ুরের পালক আর সকলের কোমর থেকে নীচ অব্দি সজারুর কাঁটার মতো গাঁথা । একজন মুখোশওয়ালা তোমার পিছন পিছন ঘুরছে, তার পিছনে আরেকজন, তার পেছনে আরেকজন । পুরো এলাকা জুড়ে ঘন বর্ষণ শুরু হল, সকলের মুখের রং ধুয়ে যাচ্ছে, গা থেকে খসে পড়ছে সজারুর কাঁটা ।তুমি চোখ ঢেকে দৌড়ে চলে এলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়ামে । স্ক্রিনের পুরোটা জুড়ে পুরানো আমলের বেনারসি শাড়ি । তোমার হাত ধরে বসে আছে অশোকনগরের ছেলে । একটা মৃদু সুগন্ধ। তোমরা জলে ভাসছ, চারদিকে নীল -পদ্ম , আমাজান লিলি, শালুক । একটা নাচের ঘূর্ণন জলে, ফরাসি চিত্রকর লা দু মালের পেইন্টিং শোভা পাচ্ছে জলের ফ্রেমে ।
কার্নিভোরাস
কেফসির ঠান্ডা ঘরে
স্তূপ কড়া চিকেনের সারি
তুমি সাঁতার কাটছ চিকেনের সাগরে
নতুন নতুন ডিশ
কন্টিনেন্টালের স্বাদই আলাদা
একটু তেল , একটু ঝাল
যে বছর রিয়াদ থেকে ফিরলে
তখন ঢাকায় এতো ফুড -কোর্ট হয়নি
খাবার বলতে চায়নিজ সি চুয়ান , থাই
মোগলাই খাবার , দেশি মিষ্টি
কাঁচাগোল্লা , বালিশ মিষ্টি ,চিনিপাতা দই
চিকেনের সমুদ্র থেকে জেগে উঠে তুমি একদম বড় রাস্তায়
সেখানে হাজার হাজার দোকান
গরুর চাপ , চটপটি , ফুচকা , ফ্রেঞ্চ ফ্ৰাই
লোকজন পাগলের মতো খাচ্ছে
যেন এখনই না খেলে সব শেষ হয়ে যাবে
কেফসির বাকেট নিয়ে
একাই শেষ করছে একজন
এসবেও স্বাদ না মিটলে চাকমাদের কুড়া গুইদা , ফিশ কেবাং
কালা চাঁদা, টেক চাঁদা খেতে সেন্টমার্টিন
তুমিও হয়ে উঠেছ কার্নিভোরাস
খেতে খেতে একসময় নিজের
লেজটাকেও খেয়ে ফেললে অকস্মাৎ
পপিক্ষেত
সারি সারি পপি ক্ষেত
তার মাঝ দিয়ে চলে গেছে সরু পথ
তোমার যাবার একটাই জায়গা
সেখানে সবাই যাচ্ছে
কেউ দেরিতে কেউ অতি দ্রুত
লম্বা পপির ডগায় লাল ফুল হাসছে
একটা কালো ছিটের ঘুঘু উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে
ঝকঝকে আকাশে উজ্জ্বল আলো
কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে মই দিচ্ছে
দূরে উঁচু পাহাড় –
সেখানে গুঞ্জার ফুল মাথায় কপোত -কপোতী
চর্যাপদের কানহুপা নদীকূলে অপেক্ষমান
পপিক্ষেতে ভরে গেছে সমস্ত আকাশ
তুমিও উড়াল দিলে শূন্য খাঁচা ছেড়ে