অনুবাদ কবিতা

 

এই পৃথিবীতে আমরা দু’দণ্ডের  জন্যে চমৎকার ছিলাম 

ওসেন ভুয়ং

অনুবাদ—বঙ্কিম লেট

 

i

বলো,  সে-সব  খিদে ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

কেননা, খিদে  তাই-ই যা শরীরকে না দিলে, শরীর জানে,

শরীর থাকতে পারে না।

 

আরও একটা যুদ্ধে চাঁছা-ছোলা

এই সোনালি রঙের সূর্যরশ্মিই

আমার হাতকে তোমার বুকে

গেঁথে রাখে

 

আলপিনের মতো

 

 

i

তুমি, ডুবে যাচ্ছ

আমার আলিঙ্গনে—

থাকো

তুমি, তোমার শরীরকে ঠেলছ

স্রোতস্বিনীর ভিতর

ঠিক পর মুহূর্তেই

একলা হয়ে যাওয়ার জন্যে—

থাকো

 

i

 

আমি তোমাকে বলব , কীভাবে ক্ষমা পাওয়ার মত যথেষ্ট দোষ আমরা করেছিলাম।

কীভাবে  একদিন রাতে আমার বাবা আমার মাকে ঝাপটা মেরে

ঘূর্ণিকরাতটা রান্নাশালের টেবিলে নিয়ে গেল; তারপর  স্নানঘরে গিয়ে

নতজানু হয়ে বসেছিল যতক্ষণ-না আমরা দেয়াল ভেদ করে তার বোবা কান্না শুনেছিলাম।

চূড়ান্তমুহূর্তে  আমি বুঝেছিলাম একটা মানুষ প্রায় আত্মসমর্পণের প্রাণী।

 

i

 

বলো আত্মসমর্পণ ।বলো শ্বেতপাথর । স্প্রিঙের ছুরি ।মাধবীলতা । স্বর্ণচাঁপা।

বলো শরৎ ।তোমার চোখ সবুজ হলেও , বলো, শরৎ। চড়া রোদ হলেও ,বলো সৌন্দর্য ।

বলো এর জন্যে তুমি খুনও করতে পারো।  ভোর না হওয়া ভোর

তোমার গলায় দলা পাকিয়ে  উঠছে।

তোমার নীচে আমার কাতরানি সেই চড়ুইটির মতো যে পতনে চমকে গেছে , মূর্ছা গেছে ।

 

i

 

গোধূলি : আমাদের ছায়ার মাঝে মধু’র ছুরি,  শুকিয়ে যাচ্ছে ।

 

 

i

 

আমি পালাতে চাইছিলাম—তাই এক অপরিচিতের গাড়ির দরজা খুললাম । লোকটা ডিভোর্সি । সে   তখনও বেঁচে ছিল ।সে মুখে হাত চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল (তার হাতদুটোর স্বাদ মরচের   মতো)। তার চাবির গোছায় লাগানো গোলাপি ব্রেস্ট ক্যান্সার রিবন পাক খেয়ে  গাড়ি স্টার্ট করে দিল। আমরা এখনও  বেঁচে আছি এটা প্রমাণ করার জন্যে একে অপরকে স্পর্শ করিনি ?

আমি আগেও একবার এই এখানে এসেছিলাম।চাঁদ দূরে দপদপ করছিল , চাঁদ আমার ঘাড়ের বিন্দু   বিন্দু ঘামে বন্দী । আমি ভাঙা জানালা দিয়ে কুয়াশাকে ছাপিয়ে ঢুকতে দিয়েছিলাম

আর আমার  ছোবল-দাঁত ঢেকে ফেলতে দিয়েছিলাম।আমি যখন চলে এলাম ,বলেরো গাড়িটা  তখনও  বসেই ছিল , যেন চারণ ভূমিতে  একটা  বোবা  ষাঁড় ,ওর চোখ দুটো শহরতলির বাড়িগুলোর দেয়ালে পড়া আমার ছায়াকে ঝলসে দিচ্ছিল । বাড়ি ঢুকে  একটা টর্চের মতো  বিছানায় আছড়ে পড়লাম ,আর দেখলাম আলোর শিখাগুলো আমার মায়ের বাড়িটিকে কুটকুট করে খেয়েই যাচ্ছিল যতক্ষণ-না ভোরের আকাশ দেখা  দিল। সে আকাশ বিশাল এবং বিনিদ্র লাল। বলতে পারি ,আমি কীভাবে ওই আকাশ হ’তে  চেয়েছিলাম—কীভাবে একসঙ্গে উড়ান এবং পতনকে ধরতে চেয়েছিলাম।

 

i

 

বলো তথাস্তু । বলো  সংশোধন হোক।

যাইহোক

বলো, হ্যাঁ  ।বলো , হ্যাঁ ।

 

i

 

শাওয়ারের তলায় , ঠাণ্ডা জলে ঘেমে আমিসাবান রগড়েই যাচ্ছিলাম…

রগড়েই যাচ্ছিলাম ।

 

i

 

পূর্ব জন্মে ,তুমি বলতে পারো,

দুটি মানুষ ভালোবেসেছিল

কারণ , যখন তারা ব্রীজের উপর পিকাপ ভ্যানটি চালাত

তখন তাদের ডানা যথা সময়ে গজিয়ে যেত ।

 

কোনও কোনও দিন ওই  ভ্যানের ভিতরে আমি থাকি

কোনও কোনও দিন  অপেক্ষা করতে থাকি

 

i

 

এমন কিছু দেরী হয়নি । আমাদের মাথায় ডাঁশের জ্যোতিশ্চক্র

আর গ্রীষ্ম এইমাত্র এসেছে ,সে এখনই কোনও পোড়াক্ষত রাখতে পারবে না।

আমার জামার ভিতর তোমার  একটা হাত

যেন রেডিওর ভিতর শোঁ-শোঁ  গোলযোগ তুমুল বাড়ছে।

তোমার আরেকটা হাত  তোমার বাবার  রিভলভারটিকে

আকাশের দিকে তাক করছে ।

একটার পর একটা নক্ষত্র ধরা পড়ছে রিভলভারের লক্ষ্যবিন্দুতে ।

অর্থাৎ, আমি ভয় করব না যদি ইতিমধ্যে আমরা এখানে এসে পড়েছি ।

ইতিমধ্যেই শরীর যা নিতে পারে তার চাইতে বেশি পেয়েছি ।

মানে, একটা শরীরের পাশে আরেকটা শরীর অবশ্যই একটা শস্যক্ষেত হবে

যে ক্ষেত টিকটিক করা ধ্বনিতে ভ’রে থাকবে।

মানে, তোমার নাম শুধু ঘড়ির ধ্বনি

যে ঘড়ি আরেকটি মুহূর্তের জন্যে পিছিয়ে রাখা হচ্ছে,

আর আরেকটি সকাল তোমার মায়ের সামনের বারান্দায়

দেখে ফেলছে আমাদের পোশাক-আশাক

যে পোশাক আমরা ঝরিয়ে রেখেছি

এক সপ্তাহের বাসি

লিলি ফুলের মতো

 

**

কবি-পরিচিতি : জন্ম ১৪ অক্টোবর ১৯৮৮, ভিয়েতনামের সাইগন-এ (বর্তমানে হো চি মিন সিটি)। দু’বছর বয়সে শরণার্থী হিসাবে আমেরিকায় আসেন। ইংরেজি ভাষার এই তরুণ কবি ইতিমধ্যেই দশটির বেশি পুরষ্কার ও সম্মান লাভ করেছেন। এখন পর্যন্ত রচনা করেছেন তিনটি কাব্যগ্রন্থ :Burnings(2010),No(2013) ,এবং Night Sky With Exit Wounds