শান্তনু পাত্র জীবনকে, প্রেমকে দেখেছেন ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে। অনন্য সেই অন্তর্দৃষ্টি। প্রেমকেও তিনি উন্মুক্ত আকাশের মতো মুক্ত করে দিতে চান, যাতনা না হয়ে নির্বাণ হোক : ‘ভ্রমের পিঞ্জরে পড়ে পাখি /খাঁচাকে তার সংসার মনে হয়!’ কবিতার থাকে দিব্যদৃষ্টি; শান্তনুর এই কবিতাগুলোয় দিব্যদৃষ্টির সন্ধান পাওয়া গেল।
কবিতা আশ্রম
শান্তনু পাত্রের কবিতা
খাঁচার পাখি
ঢলকিশোর পাড়ে, জ্যোৎস্নাশাড়িতে
একলা দাঁড়িয়ে কিশোরী, বিবাহিতা…
অকারণ মুখভারে
অবনত অশ্রুপাতে
উপেক্ষা সে অর্পণের মতো…
এভাবেই নদীজন্ম
এভাবেই ফিরে ফিরে আসা…
ভ্রমের পিঞ্জরে পড়ে পাখি
খাঁচাকে তার সংসার মনে হয়!
সুজাতা
অনাবৃত অন্ধকারে
নিটোল শরীরী ভাষায়
জৈবিক প্রচ্ছদে
ভ্রমের বৃষ্টি এলে
কুয়োতে ঝুলে থাকা দড়ির মতো
জলের স্পর্শলোভে কেঁপে উঠি…
অন্ধ গলিপথ জুড়ে
মুহূর্তেই যে দৃশ্যপটের জন্ম হয়
আমি তার নাম দিই – প্রেম…
শীতল গভীর জলে
তোমার মুখের প্রতিচ্ছবি…
ওই আবছা চন্দ্রাহত মুখ দেখে
রামকিঙ্করের মতো শান্তিনিকেতনে
গড়ে তুলি আশ্চর্য ভাস্কর্য…
স্ফীতি
অনুভূতির নিশ্বাসে পুড়তে পুড়তে
অভিসার পরিধিতে ভিজতে ভিজতে
অভ্যাসবশত জন্ম লিখে দিয়ে
একটি প্রলয়কাব্য রচনা করা যেতে পারে…
স্রোতস্বিনীর প্রত্নতাত্ত্বিক মায়ায়
আপ্লুত প্রজাতি যদি রা কাড়ে
সমূহ অতীত ছিঁড়ে ফেলে
আমিও বাঁকুড়ার মুড়ির মতো ফুলে উঠব…
দীঘলগ্রাম
আমি দীঘলগ্রামে যাইনি কখনও…
তোমরা গেছ কেউ?
তোমরা কেউ বলতে পারবে-
সেখানে কি শান্ত কোনও দীঘি আছে?
শুনেছি, সেখানে জলে ডুবে
আত্মহত্যা করেছে একটি
গ্রাম!
শুনেছি, প্রতি সন্ধ্যারতিতে
সেখানে বিষাদসংগীত বাজে!
সারিগান
অপ্রয়োজনে তুমি ছিলে
প্রয়োজন নেই, তুমি নেই
এই তাম্রভাব কেটে গেলে
হিমসন্ধ্যা নামে…
ভণ্ড শব্দেরা বদলে যায়
ভস্মশরীরে…
ভিজে যায় ভস্মজ্যোৎস্নায়…
অনুনয়ে চাঁদ জ্বলে ওঠে…
অহেতুক অতীত অপচয়ে
যন্ত্রসংগীত ঘুমিয়ে পড়ে…
সারিগানে মেতে ওঠে বাউল বাতাস…