You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৮৯ সংখ্যা
ঋণ: জোয়ান মিরো

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৮৯ সংখ্যা

অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে লিখছেন স্বপ্নদীপ রায়। সংশয়ের ঘোর। মহামারী জ্বরের ঘোর। সূচিভেদ্য অন্ধকারে পথ হাতড়ানোর ঘোর। ঘুমের ভিতর, স্বপ্নের মধ্যে বিড়বিড় করার মতো পঙক্তিগুলি। যে ইচ্ছে দিনের বেলা পূর্ণ হয় না, অশুভ শক্তির প্রকোপে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, সেই ইচ্ছেগুলো জুড়ে নিচ্ছেন স্বপ্নে, কবিতায়—কোনো এক মহুয়াজন্মের অপেক্ষায়।

…কবিতা আশ্রম

স্বপ্নদীপ রায়

স্বপ্নদীপ রায়ের কবিতা

ও কার কান্না? কান্নাই বোধহয়। কোনও ব‍্যথা হয়তো জ্বালিয়েছে ফের আগুন! ব‍্যথাই হবে। বোধহয়। না কি সে হাসছে, আর তার হাসিকেই কান্না ভেবে সামঞ্জস্যের মাত্রা খুঁজছি আমি?
গতকাল সন্ধ‍্যায় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভাবছিলাম প্রেমিকার কথা, আর সেই প্রেমিকা যখন লাইনের শেষ কর্ডটা ধরে এল কাছাকাছি,
ভাবলাম, ভিজে যাচ্ছে না তো আমার স্ত্রী?
সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আজকাল সব এমনি…

এমন কেন হয়? পথ চলি, ঘুম হয় না। সারি দিয়ে কালো কালো রেখার মতন কিছু মানুষ; দুই এ তিন ধূপকাঠির আউটহাউস। তাকিয়ে দ‍্যাখে আমার সবুজ ধানখেত, তাকিয়ে দ‍্যাখে মাটি অবধি; এমনকী নীচের কঙ্কাল—তারও নীচের কিছু জাঢ‍্যহীন চাওয়া; এসব দেখাতে দেখাতে ঘুম পায়। ঘুমিয়ে পড়ি অনেকগুলো চোখের ভেতর যাদের করোটিতে তখনও নির্মলকে গলা টিপে ধরার দুর্যোধন জেদ। নিদাঘে পুড়ে যায় গলিপথ, মিহি সুড়ঙ্গ, তোমার স্বপ্নকেশের বিছানায় অমন রঙিন কোন ভোর! পথ চলি। ঘুম হয় না। পথ চলি। ঘুম হয় না। এমন কেন?

দুটো কথা বলতে গেলেই রাত হয়ে যায়। কেমন রাত? যে রাতের ভেতর কোন‌ও নরম ছুঁতে পারেনি তার সন্তানের নাভি, যে রাতের ভেতর ঘুরেঘুরে আগুনলাগা জোনাকি বলে; পথ, পথ কোথায়? অথচ কথা!আমাদের কথা? সে-সব অক্ষরেরা সদ‍্যজাতর মতো অসুরক্ষিত কিন্তু অনন্তপ্রভা!তারা কি কোন‌ওদিনই বুঝবে না রাতের প্রেতযোনি, তারা কি কোন‌ওদিনও দেখবে না কীভাবে রতিক্লান্ত সূর্য নিতান্তই শুয়ে থাকে দিগন্তবলয়ের ধুলোয়?
দুটো কথা বলতে গেলেই রাত হয়ে যায়।
রাত!
অহো, আমারও শুকিয়ে আসছে অগ্নিনিলয়…

এই যে বসে আছো তুমি। শরীরের ভেতরে একটা মহুয়াজন্ম— ঘুরছে ঘুরছে, কেবল ঘুরছে। আমি উৎপাদ দেখছি, প্রাচীন গাছের ছালের মতো নাছোড় চামড়া, এর ভেতরেই হয়তো সেই ঝড়। এসব ঝড়ে পাতা ওড়ে কি? ফলকের গায়ে একটা একটা করে শব্দ বসাই, বনে বনে ঘুরে ঘুরে বাঁধন সেলাই পাতি। ফিরে আসি, ছুঁচ হাতে সুতো হাতে। ছক বরাবর পথ ফেলি। তবুও ছোট হয় পায়ের মাপ। আমাকে ফিরে আসতে দেখে উঠে যাও তুমি। হ‍্যারিকেন জ্বালো। সেই আলোয় ঝাপসা হয়ে যায় দিন রাত্রি। শিশুর মতো তখন আমার শরীর জুড়ে শুধুই কান্না, শিশুর মতো আমার শরীর জুড়ে তখন শুধুই উৎসব। সেখান থেকে উঠে আসা একসারি সাদা বকের মতো আচরণগুলি প্রশ্ন করে, প্রশ্ন করে ভীষণ : ‘তুমি বসতে শিখেছ কি?’

পুকুর ভেজা পায়ে রোদবারান্দা পেরিয়ে যেসব অক্ষরেরা প্রতিদিন গড়িয়ে আসে রাত্রিবাসে তাদের বেকায়দায় জড়িয়ে তুমি জামা পড়েছ বেশ।
আমি অবাক হই না, আমি অবাক হই না তত যতটা অবাক হই ভাবলে, তোমাকেও আপন ভেবে অক্লেশে দু’মুঠো বেড়ে দেয় আমার মায়ের বক্ষদেশ—


Leave a Reply