নিস্তব্ধ বসন্ত আসবে একদিন পৃথিবীতে। প্রবীর কোনারের কবিতাগুলো তারই পূর্বাভাস দেয়। মানুষের কাছে পৌঁছে যাক এই আর্তি।
…কবিতা আশ্রম
প্রবীর কোনার
অমানুষ
কদিন আগেও চরাচরে হাঁটলে
দু’পায়ে এসে গড়িয়ে পড়ত জল
তুমি এভাবেই দেখতে দেখতে বড় হয়েছ
আমাদের জঙ্গম বন্ধুত্ব আর যারা দেখেছে
তাদের কেউই বোধহয় জানে না
তোমার দীর্ঘ উদাসীনতায় নদীও অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে
তুমি যতবার মুখ ঘুরিয়েছ সে ততবারই বেঁকে বসেছে
এখন চরাচরে অন্য ছবি, আমাদের গল্পের আসর মৃত
স্নানঘাট পাল্টেছে পাখিরাও, মাঝির ঘরে হাঁড়ি চড়েনি
কেউ হিংসায় খুবলে নিচ্ছে ওর অমূল্য মোহর
এই ভাঙাচোরা শরীর নিয়ে তুমি কবিতা লিখতে বসেছ
পাঠক বিভ্রান্ত, আয়নায় একবিংশতি অসুখ
এখন তাই আমাকেই নেমে নেমে যেতে হয়
যখন দেখি নামার আর শেষ নেই
তোমার কবিতার মুখোমুখি বসি, প্রশ্ন করি, আর বুঝি
নদীও সংবেদনশীল এখন
সে আমাকে অমানুষ গোষ্ঠীর এক প্রতিনিধি ভেবেছে।
পরিবেশ পরিচয়
উত্তরায়ণের ঠিক পরপরই
ঘরে তালা চাবি দিয়ে তোমার কাছে আসতেই
আসন পেতে বসতে দিলে
যা বরাদ্দ তারও বেশি ছায়ায় ঢেকে রাখলে
ডালপালা নেড়ে চেড়ে মুছে দিলে সর্বাঙ্গীণ ঘাম
আমার মা এইসব জানত
যেদিন থেকে আমাকে পেটে ধরেছিল
ভিতরে ভিতরে তোমাকে জলের লাইনে দাঁড়াতে হয়
তোমাকে যারা যারা কথা দিয়েছিল
ফিরিয়ে দেবে বসতবাড়ি
বকেয়া ভিটেমাটি
এখন তারা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত
পরিবেশ পরিচয় পড়ে বেশ বুঝেছি
তাদের সবারই হাতে কুঠার ছিল
যা তুমি দেখতে পাওনি রাত্রির দীর্ঘ ঘুমে।
সবুজ বর্ণমালা
এখন গাছের তলায় গেলে
বন্ধু হতে পারি না আগেকার মতো
তবু সে আঙুল বাড়ায় পুরাঘটিত বর্তমান ভুলে
নুইয়ে দেয় শৈশব খেলাঘর
একলা একলা কতক্ষণ আর খেলা যায়!
এখন আর কেউ নেই
অন্য পাড়ায় অন্য বাহানায় চলে গেছে
সময়ের পারে দেখি তারা সবাই সময় কাটাতে আসত
আর আমি আসতাম খেলতে
হয়তো তুমিও বুঝেছ তাই অভিমান বাড়তে বাড়তে
নির্বাক তুমিও
পুরনো বর্ণমালায় অসংখ্য ক্ষতদাগ…
তোমাকে দোষ দেব না
প্রজাপতিরা ফুল দেখতে দেখতে খেলে
চলো, আমরাও কমিয়ে নিই বয়স
আমাদের সমবয়সী মন এক হলেই একদিন না একদিন
গন্তব্যের খুব কাছে চলে আসব
ফুটে উঠবে সবুজ রোজনামচা ।
প্রকৃতিসঞ্জাত
অনেক মানুষ মানুষ খেলেছ
এবার গাছ হও
মেঘ কী বলছে একবার শোনো
শুনলে বুঝবে, গাছেরা পুরোদস্তুর মেধাবী
মেঘের ডাকের অনেক আগেই ওরা প্রার্থনায় বসে
কোনও কিছু না-ই হলে নিজের কাছে ফিরে যাও
আর দ্যাখো, একটি নদীকে কত ক্ষত দিয়েছ
ভেঙে দিয়েছ সঙ্গম মোহনার আগেই
জখম মাছ, নৌকোর জলজ কৈশোর
এখন তোমার কুশলতা ভাললাগে না আমার
ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুরি ওড়াতে ওড়াতে
গোধূলি নামলে
যদি দেখি পুরোনো বাতাস ফিরে এসেছে জানালায়
আমি দরজা খুলে এগিয়ে যাব
কবিতায় লিখব
তুমি প্রকৃতিসঞ্জাত।
ক্রান্তিকাল
যা ভেবেছি অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল
আর একটু পরে এলে
যে রোদ নিয়ে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ছিল
চলে যেতে পারত
সে চলে গেলে তারপর যে আসত
সে আমার পরিচিত নয়
এখন ক্রান্তিকাল,
এমনিতেই জোড়াতালির সময়
যত ঝড়-ঝঞ্ঝা ,মরশুমি দোষ
কোনওটাই আর হবে না এই আশ্বাস পেলে
জ্যোৎস্না ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।