কনক মণ্ডলের দৃশ্যের ভিতর অদৃশ্যকে দেখা, নিজের ভিতর নিজেকে দেখার ধ্যানতন্ময়তা আমাদের আলোড়িত করে।
কবিতা আশ্রম

কনক মণ্ডলের কবিতা
বাঁশির বিবরে
বাঁশিটি পড়েই রইল, তাকে ধরিব না—
ধরা যে দেবেই এ আত্মবিশ্বাস
আমাকেই মারে;
মারে চুম্বনের ছায়া, বিষথলি,
শূন্যভাঁড়ার, উনুনে জ্বলা হাঁড়ি;
তোমাকেও মারি—।
মায়ের কল্পিত ভ্রমপথ তুমি নেবে?
তবে এসো আরশি খুঁজি,
ধুলো ঝেড়ে সঘন নিশ্বাস
পুড়ে দিই বাঁশির বিবরে…।
জাদু করি, জাদুকরে।
বুনোপায়রা
আমি সেই বুনোপায়রা
তোমাকে উড়িয়ে এনেছিল
এই ঝড়ের রাতে।
এখন ধ্বনির ঝড়,
ধ্বনি ওঠে কক্ষে,
বয়ে যায় আষাঢ়ের ক্ষতে।
ক্ষত সারে? ক্ষত মরে?
প্রিয় আখ্যান-অনল
আমার প্রেমিকা!
ডুবে যাব ডুবুরির মতো
গাছেদের ভিড়ে—
নবীন পল্লবে হবে দেখা।
আমি সেই বুনোপায়রা
তোমাকে উড়িয়ে এনেছিল
এই আলোর রাতে
নির্জনের খেলা
কান পেতে থাকি কানেরই ভেতর
আরও নির্জনের ঘরে ঢুকে বসি কোলাহলে।
এখন নিজের ঘাম মাটিতে গড়িয়ে এলে
শব্দ হয়, কেঁপে কেঁপে উঠি কম্পন তরঙ্গ ভয়ে
দেহের গভীরে আরও দেহের খোঁজের মতো
আবিষ্কার করি প্রতি অঙ্গ।
সেখানে জীবাশ্ম খুঁড়ে তুলে আনি মায়ের যৌবন
তোমাকে বুঝিয়ে বলি, হাড়ে হাড়ে গড়ে আছে
নির্জনের খেলা, তাকে শব্দ করতে দিয়ো না।
কুহক
আর কত মিথ্যা বলে কুহক জাগিয়ে
তোমাকে চাঁদের কথা, ছাতিমের কথা
বলে যাব! আমি পারছি না ক্রন্দন মুছিয়ে
কদমের ঘ্রাণ নিতে। বমি পায়, শুধু বমি।
পেট ফুলে মিথ্যা উঠে। কালো কালো জাম,
থোকা থোকা জামরুল— আর সুহৃদ তোমার মুখ
আমাকে প্রাচীন হতে মানা করে!
হাটে-বাজারে ছিঁড়েছি কদম্বকেশর।
ওই তো মেয়েরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাচ্ছে
ফাস্টফুড পিজ্জা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি কী সুন্দর মুখেদের
ভিড়ে হাঁড়িভাঙা খেলা চলে।
আমি পথ দেখি— ভাবি— পথ বেঁকে গেল।
প্রতিটি পথের শেষে ঝুলে আছে আরও আরও পথ।
চোখ বেঁধে দাও—
সিদ্ধান্ত আমাকে ক্ষ্যাপা, মত্ত করে তোলে।
কোন পথ আমাদের পথ? এত এত মত
সবই কি মিথ্যার ভেলকি, না ইন্দ্রজাল?
ভেবে ভেবে তোমাকে ভুলিয়ে কেটে গেল কতকাল!
কাঁসাই নদীর বালি
যেভাবে তোমার হাত ধরতে চেয়েছিলাম…
বলা হলো না যে পক্ষীকর্ণটিকে—
‘আবার সম্ভাব্য দেখা হবে।’
ধরো দেখা গেল ঠিক মাহাতদের
বাড়ির পেছন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছ কলতান করে।
আমি ব্যস্ত আছি ধার শোধ দিতে
গুনে গুনে সুদ দিচ্ছি সুদখোরের হাতে…।
একে একে ভেঙে দিচ্ছি নিজেরই অর্জিত দেহ
মন ভাঙে, ভাঙে কুহু ধ্বনি আর লেখকের মুঠি
আরও অন্ধ ভৃত্য হয়ে প্রভু, বাঁশিকে বানিয়ে তুলি
বৃদ্ধের কম্পিত হাত।
শিমুল গম্ভীর ভারী হয়ে ঝরে গেল,
তবু,
বলা হল না যে পক্ষীকর্ণটিকে—
‘আবার সম্ভাব্য কথা হবে, ভালোবাসব
কাঁসাই নদীর বালি দিয়ে ঘর বাঁধব।’