You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৭৮ সংখ্যা
ঋণ: অসিত কুমার হালদার

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৭৮ সংখ্যা

এখন তো শীতকাল, অপ্রাণীবাচক যাতেই হাত পড়ে কেমন হিম ঠান্ডা, কিন্তু এখনও খরগোশ বা কাঠবিড়ালির গায়ে হাত বোলালে উষ্ণ হয় হাত, ভিতরে একটা হৃৎপিণ্ড কাঁপছে অনুভব করা যায়। রাখী সরদারের কবিতাগুলি সেইরকম। তিনি প্রমাণ করে চলেছেন কবিতাও একটি প্রাণী ।

…কবিতা আশ্রম

রাখী সরদার

রাখী সরদারের কবিতা

কী আশ্চর্য! ভ্রমর,তুমি এখনও তথাগতকে ছুঁয়ে!
আজ আমিই তথাগতর উন্মত্ত কামিনী

এই ঘোরের রাত্রে তুমি
কোথায় থাকবে?

চলো, তোমাকে বাল্মীকির কুটির
অবধি পৌঁছে দিই, যেখানে নিবিড়
বনে উড়ছে প্রজ্ঞার রেণু, প্রতিটি
শ্লোকের মাঝে অপেক্ষা করছে
বিপুল পদ্ম

যাও পুষ্পময় হও

এখন আমার শিরায় শিরায় কাঁপছে
অথই নেশা

শরীরের আনাচেকানাচে
তথাগতর সুগন্ধ।
বুকে দুলে উঠছে তথাগত
ওষ্ঠে জ্বলে উঠছে তথাগত
চিবুক জুড়ে তথাগত
আমার মায়া ও মাধুর্যে তথাগত
আমার আমাতে তথাগত

এই তথাগত ছাড়া
আর কিছু নেই গো ভ্রমর
এবার তো স্পর্শ ভাঙো

আমার আকাশ ও অন্তিম জুড়ে
তথা, তথা, ও তথাগত

আজকাল স্বপ্নেও দেখতে পাই
এক পতঙ্গছায়া প্রান্তর!অনুভবের
মস্ত পৃথিবীটা কী রুক্ষ হয়ে
পড়ছে!

তথাগত, তুমি সেই রুক্ষতার
ভেতর বন্ধন শিথিল করে এখনও বসে!

তোমার কপাল জুড়ে যে প্রস্থান আঁকা
তাকে সুদর্শন পোকা ভাবি; মুঠোয়
আটকে থাকা হাওয়ায় উড়িয়ে
দিই পোকাগন্ধ।

মাঠের ওপারে এখন ডিসেম্বরের
রোদ্দুর, অন্তরের বিষাদ পুড়িয়ে
মুছে ফেলছি কাঁপন

তথাগত, এই ফাটা ঠোঁট এখনও
তোমার আকাঙ্ক্ষায় উন্মাদ

অথচ,
কোনো শব্দ না করেই যেভাবে
উঠে গেলে, মনে হল,

শুকনো পাতা মাড়িয়ে ফিরে যাচ্ছে
বিচ্ছেদের বাঘ, তুমি তার
নিজস্ব ছায়া।

আমি অন্তিম হরিণী হয়ে শুয়ে থাকি
পৃথিবীর পদতলে,অপেক্ষা করি

কখন আমার সমগ্র রক্ত-মাংস
অনুরঞ্জিত হবে ভালবাসার
নখে…

সতেরো বছরের নিঃসঙ্গতার পাশাপশি এগিয়ে চলেছে নদীটি

স্রোত তো নয়, যেন
স্রোতে স্রোতে রতিহর্ষ সংলাপ!
বিপুল অস্থিরতা, সঙ্গে তথাগতর
রূপ-সম্ভোগময় ছবি–
একঝাঁক চুল
বাঙ্ময় চোখ
আর প্রবহমান যুগের চেয়েও
মহার্ঘ্য ওই মুখ আমাকে টানছে!

অথচ,
তথাগত,তুমি তো কবেই সেই
শাদা পাথরের দেশে অশ্রু হয়ে গেছ!

তবু
এত শূন‍্যতার ভিতর কেমন
আলো হয়ে নদীটি!
রে অচেনা নদী, আর কত পথ বাকি?
আর কত বয়ে যাবি!

তথাগত, এই বয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস
কি একপ্রকার মোহপথ? এত ভুল,
এত ভয়, এত প্রেম এ যেন এক
বিশাল দণ্ডিতের ব্রহ্মাণ্ড!

এবার সরাসরি
শূন‍্যের দিকে তাকালাম, তথাগত,
তবে এই নাও আমার সমগ্রের উগ্রতা
এসো,
বাকিটুকু শম ও অস্মিতার সঙ্গে
মিশিয়ে দিই,
বয়ে যাই,
ভেসে যাই কালের শরীরে।

Leave a Reply