গূঢ় ইশারায় বর্তমান সময়কে ধরেছেন সঞ্জয় চক্রবর্তী, জীবন ও জ্বরের কেন্দ্রভূমিতে দাঁড়িয়ে তুলে এনেছেন মহাজীবনের সারাৎসার।
কবিতা আশ্রম

সঞ্জয় চক্রবর্তীর কবিতা
কুয়ো
মাটিবাঁধা কুয়োর পাড়ে ঝুঁকে থাকা
দুটি গভীর চাউনি, লোভ
জলের গভীরে মাছ আর মাছেদের
তুলতুলে আঁশটে সাঁতার
আরও নীচে পাঁকের অতলান্তে গড়ানো
গুগলি আর শামুকের মাংসল আলো
জিহ্বার পিচ্ছিলতা বেয়ে তুলে আনি এইসব।
সাজাই, ধোঁয়া ওড়ে
মায়ের আঙুলের রান্নায়
আবর্তিত হয় গ্রামীণ জনপদ।
সময়
এখন চুপচাপ থাকার সময়
বৃষ্টি পড়ছে
বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে জল, জলের গোড়ালি, হাঁটু
এখন শান্ত থাকার সময়
চারিদিকে অসংখ্য ভুলভাল আলপথ, জ্বরের আগাছা
এখন লুকিয়ে পড়ার সময়
সাহসী শরীর ভেঙে দাঁতের কোটরে লুকিয়ে পড়া
এখন তো ঘুমিয়ে যাওয়ার সময়
মেয়েলি কোমরের ভাঁজে সঙ্গমের বারুদ আর
বালির কার্তুজ কাঁধে রাখা
এখন ভয়ানক ক্ষুধার সময়
অন্নের আলপনা বেয়ে ক্ষুধার্তের
হাঁ-এর মুখোমুখি সটান জেগে ওঠা।
খরা
বাবার শরীরে খুব ঝোপঝাড়, কাঁটাগুল্ম
মায়ের শরীরে গহন শীতের রাত
দিদির আঁচলে দিনরাত প্রজাপতি ওড়ে
মা বলে, ভাতারখাকি, দূর হ
দাদার হয়েছে, মরণ!
ভাঙা ঘরে আঁচড় কাটে শ্রাবণের কঙ্কাল,
আর এক ফ্রকপরা ছোটবোন
শরীরের শিকড় তুলে কোথা থেকে নিয়ে আসে
একথালা উপচে পড়া ভাতের বিবাহ
ছোটভাই পা ছড়িয়ে আলপথ হয়ে রাতদিন শুধু হাসে আর হাসে
আমি মুখ নিচু করে হাঁটি
আমার পৌরুষ ওড়ে শকুনের ঠোঁটে।
গন্ধ
রোজ বিকেলে আমার বাবা গন্ধ বিকোতে
বেরিয়ে পড়ে
গাঁয়ে গাঁয়ে মানুষের ঘরে ঘরে
বাবার ঝোলাতে কত রকমের যে গন্ধ
স্মৃতির গন্ধ শরীরের গন্ধ পথের গন্ধ
ফুল পাখি আর প্রসবের গন্ধ
কোথা থেকে যে বাবা এত গন্ধ কুড়িয়ে আনে
বাবার ঝোলা ভর্তি অনেক অনেক গন্ধ
গন্ধের বিনিময়ে বাবা গন্ধ কিনে আনে
আমরা ক’ভাইবোন ভাতের গন্ধ মেখে ভাত খাই
তরতর বেড়ে উঠি গন্ধে গন্ধে
আমাদের গন্ধের গল্প ছড়িয়ে পড়ে
মানুষের উষ্ণতায়, দিগন্তরেখায়।
নাচনী
তুমি তো নাচ উড়ানী
পথের ধুলো ওড়াতে ওড়াতে
হলুদ পলাশ রেখেছে প্রণয় তোমার ওষ্ঠে
চোখের আঁচল বিছিয়ে ফিসফাস বলেছিলে:
আমি খেমটি, নাচটি তোমার
কারিগর, এসো না আমার ধুলোর তুলসীতলায়।