You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৬৭ সংখ্যা
By Anish Kapoor

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৬৭ সংখ্যা



কবিতা একটি প্রবাহ। জীবনের মতো। আকাশচূড়ার গা বেয়ে নামে। নানা খাতে, নানান ধারায়। রসসিক্ত করে
মাটিকে। সবুজ হয় প্রকৃতি। তারপর এই সব ঝরনা মিশে যায় মহাসমুদ্রে—মহাপ্রবাহে। আজকের
তরুণ সেই মহাপ্রবাহের অংশ। ধূসর এই পৃথিবীতে আরও কবিতা চাই। কবিতা পাপনাশক। অন্ধকারে
প্রদীপের পরিচর্যা  করছে তরুণ কবিতারা…

—কবিতা আশ্রম

সৌরভ লায়েক

কোনও কথা মনে আসছে না
কার‌ও কথা মনে আসছে না
কেমন যেন গাঢ় অভিসন্ধির ঘোর
জড়িয়ে রেখেছে কুহেলি কলুষ তমসায়…

কবিতা আসবে কোথা থেকে
দুরভিসন্ধিগুলো মনের ভিতর যেন
যেন ফেনিল জলের মতো পাক খায়
ডুবে যায় না-ফেরার দেশে…

হে উদাস পৃথিবী!
তাহলে কি যাবার সময় সমাগত প্রায়?

তা নয় জানি, পথে পথে কত বেলা হল
ঘাস থেকে টুপ করে ঝরে গেল শিশিরের কণা…

ছিল না কোথাও মেঘের আসবার দুখ
বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে, ভাসিয়ে গেল বুক

তোমার আসার কথা পাথরে লেখা, লক্ষ ফলক
জ্যোৎস্না রাতে মেঘের চমক
পাথর গেল ক্ষয়ে, বৃষ্টি দিল ধুয়ে

এখন এসে বৃষ্টি ভাসায় অথৈ জলে
এখন এসে জ্যোৎস্না ভাসায় পাগল বলে

রূপকথারা সত্যি তো নয়, ছোট্টবেলার সত্যি মেনে
তোমার আসার মতো আশায় টেনে
যাচ্ছি বয়ে, সবার সাথে একলা হয়ে।

জ্যোৎস্না তুমি মেরে দিলে নক্ষত্রের আলো
জ্যোৎস্না তুমি খেয়ে নিলে হিতাহিত জ্ঞান

অশ্বত্থের শীর্ণ রাত্রিছায়ে কিম্ভূতকিমাকার
প্রেমাহত মানুষের ঝুলে পড়া দেহ, যেন কোন
কসমসে চলে গেছে সময় ভ্রমণে …

সে মানুষ প্রেমিক না পাগল? হতে পারে ধান্দাবাজ!

জ্যোৎস্না তুমি তাকে দেখেছ মৃত্যুর আগে
সে কেমন কেঁদেছিল?
কতখানি ছিল সে হতাশ?

ভালবাসায় নেই
নেই কার‌ও নিরর্থক আলিঙ্গনে
আছি দ্রোহের ভিতর, মদের ঠেকে
অযাচিত মানুষের মাঝে সমুজ্জ্বল গোপনে

নেশায় নেশার ঘোরে কেটে গেছে মানুষ
হবার নেশা

ওহে এলোচুল, ওহে খাঁ বিলায়েৎ

গালিবকে বলেছি ডেকে, “শোনো ভায়া
তুমি আর আমি এক শ্রেণি, প্রলেতারিয়েত।


বিষ্ণু চরণ পাল

শীতঘুম থেকে নিজের খোলস তুলে আনি।
সার্বজনীন মঞ্চে সন্ধ্যা শেষে
এখন এলোপাথাড়ি অভিনয়।
ধিক্কারে ধিক্কারে প্রত্যেকদিন একবার মানুষ হই,
একবার নুইয়ে পড়ি কলমি লতার মতো।

মন বলছে,
এবার বসন্তে কোকিলেরা ব্যর্থ হবে।
আসলে কোকিলপ্রজাতি শুধু বসন্তে নয়,
ব্যর্থ বছরভর।
উদ্ভিদদেহ ধারণ করে অনেকের মতো
আমিও শিখে নিই বর্ণমালা,
শিখে নিই আজব ধারাপাত!

মন বলছে –
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়?
মানুষ শিখছে
এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়!

শীতঘুম ভেঙেছে ?
দৌড়াও তবে এবার।
অনেক কাজ পড়ে আছে যে তোমার!
বাড়ি বাড়ি খবর পৌঁছে দিতে হবে,
মনোরঞ্জনের জিনিসপত্র।
তোমার অফিস, আদালত, কারখানা;
তোমার স্কুল, কলেজ, জনসমাবেশ।
মিছিল, মৌনতায় বিপ্লব তোমাকেই আনতে হবে,
অথবা কারাগার, রক্ত ফোটাও;
নতুন পৃথিবী তোমাকেই খোঁজে।
হিংস্র জন্তু হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে না?
নির্যাতন, ধর্ষণ, প্রহার;
আন্দোলন, প্রতিবাদ, থেমে যাওয়া।

তোমার যে থামা বারণ।
যাও দৌড়াও,
এগিয়ে যাও সময়ের সাথে।

আমি বরং বসে থাকি নিরালায়।
পেয়ারাগাছে আজ কোকিলটা ফিরে এসেছে,
আর কি আমার অবসর আছে ?
আর প্রতীক্ষা নেই ;
এখন শুধু ফাগুন কুড়িয়ে বেড়ানো।

ষোড়শী স্বপ্নের ভার সঁপেছে আদিম হাতে,
মুঠিতে পুরুষ উন্মাদনা;
বিবর্তনের আরও এক নাম পতন।

যে সভ্যতা ইতিহাস হয়ে যায়,
মাটি খুঁড়ে দেখো
চাপা রক্তের দাগে খোদিত আছে পশুসুখ!

কয়েক শতাব্দী শেষে আবার
উঠে আসব সমুদ্রসমান পাঁক থেকে।
হাতে পুনরুত্থানের নক্সা এঁকে
দাম্ভিক রাজার মতো কব্জা করব দৈন্যবেশে…

আসলে, এখানে ঘুম ভাঙে ঠিকই,
ঠাকুমার গল্পে রাজকন্যাকে তুলে নিয়ে যায় সেই দানবেই।

রাজপুত্ররা এখন প্রচারে ব্যস্ত…

স্বপ্নের শুরুটা যেভাবে হওয়ার কথা
হল না ঠিক,
বসন্তের যৌবন বুক আগুন জ্বালাতে পারেনি বলে
নিরুদ্দেশের বাতাস ঠাই পেল না
আমার একঘেয়েমি উঠোনের ছেলেমানুষটাতে।
প্রাণের ঘ্রাণ এখানে নয়,
তবে কি যাযাবরের অদৃশ্যে লুকিয়ে?
অগোছালো পথ কৃপণ বড়,
খুঁজতে থাকে আর্দ্র স্পর্শ,স্পন্দনের অজুহাত
ঝরা পাতার শব্দ গুনতে গুনতে
ফাগুনের রুক্ষ নির্যাস গন্তব্য ভুলায়।
মহুলের গন্ধ মাতাল করে
যেন, কোনো এক আদিম প্রকৃতি হাতছানি দেয়
নেশার চেয়েও গভীর,
অকৃত্রিম আছন্নতা ঘিরে ধরে দিগন্ত
পলাশের স্নিগ্ধতা ছলনা শেখেনি বলেই
ডাক দেয় নিদারুণ।
এখানেই আমি স্বাধীন ভোরের কোকিলের মতো;
আমার অনুভুতিরা নগ্ন।

ঠিক তখনই ভাঙা সকালের ঘুমে
আমাকে ছুঁয়ে যেতে চায় আমার ইহকাল-
অনন্ত সূর্যের প্রকাশের মতো;
আমি জেগে উঠি আলোর প্রতিধ্বনিতে।


Leave a Reply