সুনীল সোনা নব্বই দশকের কবি। বর্তমানে বনগাঁয় সীমান্তগ্রাম রামচন্দ্রপুরে কৃষিজমি, বিল, কবিতা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে তাঁর বাস। ওঁর বাড়ি থেকে কয়েকশো পা দূরেই বাংলাদেশের মাটি। সুনীল সোনা কৃষক। ধানখেতের মাঝখানে তৈরি করা মাচাতে বসেই সে প্রধানত লেখালেখি করে। ভীষণ লাজুক কবি সুনীল সোনা। তিনি ছবিও আঁকতে পারেন ভাল। কবির প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পাখিদের বাংলাখাতা’। যা নব্বইয়ের একটি অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ। কবি ও কৃষক সুনীল সোনার কবিতায় ভেসে আসে ধানের সুবাস ও কৃষি-জীবনের বিপন্নতার কথা।
…কবিতা আশ্রম
সুনীল সোনার কবিতা
অগোছালো ধান
এও জানি
কে আগে ফুরাবে
মেঘ নাকি বৃষ্টি
নাকি জল
কোথাও হয়তো তুমি নীল শাড়ি
কোথাও হয়তো পাখির পালক
ঠোঁটে লাল একাকী উদাস
সোনা সোনা মাঠে অগোছালো ধান
ধানে ধানে কেউ
আলের ওপাশে জেগে থাকে
প্রিয় মাঠে কেটে যায় অনেক সময়
তারা গোনা সেই প্রিয়জন
শূন্যতার কাছে বৃথা আয়োজন
কবির বিষাদ
জীবন সফর শেষ করে
ধুলো মাখা পা নিয়ে প্রকৃত তুমি
নির্বাক দাঁড়ালে এসে
অন্তহীন সভ্যতায়
কতিপয় প্রাণের রহস্য দেখে
জানালার পর্দা দিলে টেনে
চুপি চুপি শুরু হল বাতাসের খেলা
আপেল পড়ল নিচে
সৌভাগ্যবশত নিউটন ছিলেন না অ্যাশট্রের ছাই দেখে মনে হল
কোন কবি এসেছিলেন বিষাদে
ঠোঁটের সম্পূর্ণ ছাপ শূন্যতায় ঝুলে আছে
বকুল কথা
মাঝে মাঝে সূর্যাস্তের দেখা পাই
সূর্যোদয়ের বাউল কথা শুনি
অতিক্রম করা পথের দু’পাশে
হামাগুড়ি হাঁটা মানুষের বাড়ি খুঁজি
গোধূলির ধুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে
চিত্রা নদীটির কথা মনে পড়ে
শৈশবের কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে তোমার বকুল কথা
এই মনে পড়ার ভিতরে আছে
লালন গীতির সুর ভাদু ফকিরের গান
সবটাই বিপরীতমুখী
আনন্দ গড়িয়ে যায় প্রকৃত প্রেমের দিকে
শস্যের সন্তান
বৃষ্টির নিঃস্বতা দেখে ফুলগুলি ঝরে
সহসা অস্পষ্ট হয় নিয়তির প্রেম
প্রকৃতির কোল খালি, নদী বহুদূর
শস্যে লাগে মহামারী প্রান্তরে আগুন
নিষিদ্ধ বৃষ্টির মুখে ধুলো উড়ে যায়
সবুজ ধূসর হয় শূন্যতাও বাড়ে
শুকনো ঠোঁটের পাশে পড়ে থাকে কান্না
অসুস্থ চাষির পেটে ক্ষুধার লড়াই
আয় বৃষ্টি আয় সীমার ঘুমটা খোলা
শিশুর মুখের আরতি দুঃস্বপ্ন মায়ের
বৃষ্টি আয় বৃষ্টি আয়, আয় বৃষ্টি আয়
কান্না জুড়ে স্বপ্ন দেখে শস্যের সন্তান
সংকেত
সব স্বপ্ন অভিভূত করে
তোমাকে জানিয়ে রাখা ভালো
আর কোনো উদ্বেগ নেই
তোমার সংকেত আমি বুঝি
তাই সুর ধরে এতদূর আসা
জলের নিকটে নিজেকে পাথর ভাবা
পৃথিবী আমার কাছে শুধু শস্যভূমি নয়
সূর্যোদয় সূর্যাস্তের ছায়া, প্রিয় অন্ধকার
প্রকৃত বিস্ময় নিয়ে হাঁটুমুড়ে বসা
এইভাবে স্তব্ধতার নদী দেখি আর
জেগে উঠি ফের সমুদ্রের জলে
মেঘে মেঘে মায়া হয় পর্বত চূড়ায়