আসছে শুভঙ্কর পাত্রের নতুন বই
অগ্রিম বুকিং ৩০০ টাকা
কবিকথা
শুভংকর পাত্র অদ্ভুত এক মানুষ। আপাদমস্তক কবি। কবিতা আশ্রম থেকে তাঁর ‘কবিতা সংগ্রহ’ প্রকাশিত হয়েছে। কবিতা প্রেমের দীক্ষা দিয়েছেন অনেককেই কিন্তু নিজে কবি হিসেবে আড়ালে থাকতে চান। আসলে ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষক। গাছ পাখি জীবজন্তু পোকামাকড় দেখে বেড়ান। চিনে অন্যকে জানান। প্রকৃতি অন্বেষণের আনন্দে বৃহৎ ও প্রকৃত যে সংসারের স্বাদ পেয়েছেন তিনি, তা তাঁকে স্বার্থপর মানুষের পৃথিবীকে এড়িয়ে চলতে শিখিয়েছে। শুভংকর পাত্র একজীবন কাটিয়ে দিলেন মহাপ্রকৃতির স্পন্দন শুনতে শুনতে। আলাদা কোনও আকাঙ্ক্ষা নেই। শুধু মিশে থাকা। কবির প্রকৃত কাজ তো এমনই। কবিতা আশ্রম থেকে শুভংকর পাত্রের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ প্রকাশিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে, যা আসলে প্রকৃতি-পরিবেশ ভালবাসার সহজ পাঠ।
আজ পড়ুন তাঁর দুটি লেখা। কবিতা ও গদ্যের মাঝখানের দেওয়াল তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন। আছে শুধু বিপুল, সুদূর হৃদয়…
কবিতা
শুভংকর পাত্র
মাংসের ভালোর দিক
সারাদিন সারারাত ধরে আকাশের ভেতর,
মাটির ভেতর, ঘাসের ভেতর, মায়া মমতার ভেতর
সবাই দেখলাম, সবাই মর্মে মর্মে
চোখের জলে দেখেছে, চিনদেশের করোনা চলে গেল,
তার আগে দেখেছে, রামায়ণ চলে গেছে,
মহাভারত চলে গেছে, উপনিষদ চলে গেছে,
ভারত ভাগ হয়ে গেছে। কমিউনিস্টরা সরে গেছে,
সাধের রাশিয়া টুকরো টুকরো হয়ে গেছে !
রাশিয়া হেরে গেছে, ইজরায়েল আমেরিকা বারবার
জিতে যাচ্ছে। তোমার নাম আমার নাম
আকুলি বিকুলির ভিয়েতনাম
ইউরোপ আমেরিকা নির্ভর হয়ে পড়েছে।
এ তো গেল নিরুপায়ের একদিক।
আরেকদিকে উপায়ের চিরকাল, এতো যুদ্ধের মধ্যে,
এতো শান্তির মধ্যে, এতো ধুন্ধুমার গোপন সংবাদ
দেয়া নেয়ার মধ্যে সারা রাত ঘুম হচ্ছে না তোমার,
সারা দিন তুমি ঘুমোও নি,
থেকে থেকে বিছানার চাদর খামছে খামছে ধরছো,
এরকম অসহ্য যন্ত্রণায় যদি মাংসের কথা মনে পড়ে,
যদি মাংসের কথা বলো, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই,
মেয়েদের কথা বলতে হবে।
আর যদি মাংস বিক্রির কথা বলো, তাহলে তো
ঘরে ঘরে মাংস বিক্রেতা মেয়েদের কথাই বলতে হবে।
জগতের এই কঠোর সত্য পৃথিবীর সব ছেলেরা যেমন
হাড়ে হাড়ে জানে, মেয়েরা তো অবশ্যই জানে।
যুদ্ধই হোক, দেশ ভাগই হোক আর শান্তি অশান্তি
যাই হোক, আসলে মেয়েরাই তো জানে,
তবে হাড়ে হাড়ে নয়, মেয়েরা কৌশল হিসেবে,
বেঁচে থাকার, বিলাসিতার, শোষণের নিশ্চিত
পথ হিসেবে মাংস বিক্রির কথা জানে।
প্রকৃতির অমোঘ করুণায় মেয়েরা
ভালো মাংস পালিশ করতে পারে, মাংস গুছোতে পারে,
নিজে নিজেই মাংসের মূল্য বুঝে যায়,
নিজেরাই দেখবার মতো করে শিকেয়
মাংস ঝুলিয়ে রাখতে শিখে যায়,
সবাই শিকের দিকে সপ্রশংস তাকালে,
সলোভ তাকালে, আহ্লাদিত হয়, ভীষণ খুশি হয়।
এবং নিজে নিজেই বুঝে যায় মাংসের সঙ্গে
সত্যি হোক মিথ্যে হোক একটু ভালোবাসা
মিশিয়ে দিতে পারলে মাংসের গুণমান
ভীষণ বেড়ে যায়, মাংসের দাম আরো বেড়ে যায়,
মাংসের চাহিদাও অনেক গুণ বেড়ে যায়,
একেবারে ভিখিরির ভাত রুটির মতো কাড়াকাড়ি
পড়ে যায়। অতএব …
মাংসের প্রতি পুরুষের আজন্মের লোভ এবং
মেয়েদের মাংস বিক্রির চিরকালীন সহজাত ইচ্ছে
আর নৈপুণ্য, এই দু’য়ে মিলে সেই অনন্তকাল থেকে
সেই রূপকথার ভেতর, ফুল বাগানের ভেতর,
রাজপ্রাসাদের ভেতর, বন্ধু বিচ্ছেদের ভেতর,
গোপন আপসের ভেতর, কলহের ভেতর,
আকণ্ঠ দুঃখের ভেতর, অপমানের ভেতর
পৃথিবীতে দেখছি আনন্দের আর শেষ নেই,
আনন্দের শেষ দেখা যাচ্ছে না,
এতো আনন্দ, এতো আনন্দ ! …
বৃষ্টির জল
আজ ৬.৫.২৪ তারিখ।
আমাদের এখানে হাওড়ার বালিতে সকাল থেকেই
হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে।
আমার ঘরে দুটো বড়ো বড়ো জানলা।
পূর্ব খোলা, দক্ষিণ খোলা। পাখা চালাতে হচ্ছে না।
বলতে গেলে কালকে থেকেই এরকম হাওয়া দিচ্ছে।
আজ হাওয়াটা বেশি।
কাল তো তবু রোদ ছিলো।
আজ রোদও তেমন নেই,
মেঘলা মেঘলা ভাব। বেশ আরাম হচ্ছে।
বলছে তো আজ বৃষ্টি হবে,
কিন্তু ভাবি কবে যে হবে !
অনেকেই বলে
চাতক পাখি, ফটিকজল পাখি শুধু বৃষ্টির জলই খায়,
বৃষ্টির জন্যে হাপিত্যেশ করে বসে থাকে।
আসলে তা তো নয়, তেষ্টা পেলে
এরাও দিব্যি জলে নেবে প্রাণ ভরে জল খায়।
তবু চাতক হতে ইচ্ছে হয়,
ফটিকজল হতে ইচ্ছে হয়,
ইচ্ছে হয় বৃষ্টি পড়লে শুধু বৃষ্টির জলই খাই।
সংগ্রহ করুন :