You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৪৬ সংখ্যা

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৪৬ সংখ্যা

আকাশ দত্ত

এই সময়-সন্ত্রাসের কোষে কবিতাগুলোর জন্ম। একটি খুন হওয়া গাছের জন্য লেখা শোকগাথাটিও ধ্বংস হলে প্রবলতর নৈরাজ্যের ভিতর নিমজ্জন হয়। তখন পথের বিভ্রান্তি শব্দিত প্রকাশকেও অসংলগ্ন করেছে। কবিতার শরীরচারী মধুমাস আদতে একটি নিঃস্বতার ব্যাহত দ্যোতনা। এই কবিতাগুলোর রূপক প্রতীক সব ভয়ঙ্কর গতিশীল এবং বিশৃঙ্খল। সচরাচর কবিতা থেকে এরা দূরবর্তী।

আকাশ দত্ত

বাঁধের ওপরের জঙ্গলে
আমি যখন শরীরের ধাবমান
বিন্দুগুলো ছড়িয়ে দিতাম
তখন সকল চন্দ্রময় হুলুধ্বনি দিত।
ভাল না বেসে আমার অসুখের দিকে
মুখ করে দেখি,
অসুখ-ভরা তোমার ঘাস
অসুখ-ভরা তোমার নিয়োড়।
তবু আমার বলার
আমাকে দু’-একটা জলের
অসহ যন্ত্রণা দাও,আর
বিধুর পতঙ্গ-দোষ…

আমার মাথার ভিতর
বিস্ফোরণ শুনছি।
অথচ
অথচ ফড়িঙের মতো সাবলীল ছিলাম
অবলুপ্ত অ্যান্টেনার মতো কিছুটা…
কেউ বুঝতেই পারছে না,
আমার মাথার ভিতরে
অগাধ বিস্ফোরণের ভিতর
আমি ঢুকে পড়ছি।
সমূহ সামাজিক ন্যাংটা ও বল্লম
আমি বহনও তো করছি।
কেউ কিছু বুঝতেই পারছে না,
আমার মাথার ভিতর
বসন্তের ধোঁয়া ভরে গেছে।
দাহ্য মধু আর বিধ্বস্ত রাঙাপাথরে
ভেসে যাচ্ছে আশরীর…

সেদিন আমি কোনও গাছকেই
আর চিহ্নিত করতে পারছিলাম না।

জলাঙ্গীর কোষে বাহ্যত শূকরের জন্য
আকন্দপাতার নাভিতে
গর্জন রেখে এলাম।

বসন্ত এলে আমার
ভয়ার্ত অসুখ বাড়ে। গন্ধক ও বারুদের অসুখ।
পরেরদিন দুপুরে গিয়ে দেখি
কোথায় শূকর—এক দানবীয় ভ্রমর
সেই গর্জন খাচ্ছে।
ভ্রমর আমাকে স্বীকারই করছে না…

অশ্বথগাছটা
নারী ছিল না পুরুষ সেই
নিয়ে আমার মনে কোনও প্রশ্ন ছিল না।
এই বসন্তে সে কাটা গেল।
আমি তার আওতায়,
ঝরঝর করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কিন্ত ঘুমন্তের দোষ থাকতে পারে,
ঘুমের নয়।
ঠিক তখনই বসন্ত নানা কৌশলে
মৃতগাছের জন্য লেখা দুই নম্বর লাইন
হরণ করল।
অবলুপ্ত দ্বিতীয় চরণে
শোকগাথা লেখা ছিল।
গাছটাকে লজ্জায় আর মুখ
দেখাতে পারছি না…

চাদরের ওপর তুমি পেন দিয়ে দাগ কাটবে,
তাকে তোমার হরিণতা বলে স্বীকার করে নিচ্ছি।
তুমি উনানে হাঁড়ি চাপিয়ে গোলাপি চাল চাইবে,
সেও তোমার পাখিময়তা বলে ধরে নিলাম।

এভাবে সকল অনুভূতিপ্রবণ
ছাইপাঁশ মাছেলা গন্ধের কাছে বিক্রয় করলে
আমি নিবিড় সাপের মতো
হলুদ জঙ্গলে মিশে যাব…
আমাকে ছাড়া তোমার খরগোশের পশম হতে
ভাল লাগবে না তখন,
সজিনার বাতাস বরফ হয়ে যাবে…

নদীর নীচে দাঁড়িয়ে আমি চাঁদকে
চেটে চেটে শূন্য করেছি।
তারপর একজন ফাল্গুন জলে নামল…

জলের সাফল্যে সে আর কোনও
প্রযুক্তিগত পতঙ্গ পাচ্ছে না।
এত তীব্র প্রেম চাইনি আমি
এত তীব্র ক্ষয়,
সেও নয়।

কতজন্ম লাগবে শোধ করতে
সেই প্রশ্নটাই তো গিরগিটির মতো
গতিশীল হয়ে প্রাচীরের ছায়া ভেঙে দিচ্ছে।

এবার আমাদের অন্ধ বাগানের কথা হোক…

মুখের কষ থেকে আমি
কিছুতেই চাঁদ মুছতে পারছি না।
ধরা পড়ে গেলেই আমি
নেশাগ্রস্ত হয়ে যাই।
ছেলেবেলা থেকে একটি ভাঙা উল্কার টুকরো
আমার পায়ে গিঁথে আছে,
কিছুতেই বের হল না…
ব্যথা বাড়লে আমার ঠোঁটে লালায়
চাঁদ লেগে যায়…
আমি তখন প্রতারক এক মশালের নীচে
দাঁড়িয়ে…দাঁড়িয়ে…
চা খেতে খেতে আকাশি রঙের বিস্কুট থেকে
পিঁপড়ে ছাড়ানোর সূত্রগুলো সাজাই…

ধাঁ করে একটি শূন্যের মধ্যে
নেমে গিয়ে দেখি
শুধুমাত্র কাল্পনিক ব্যাঙ নয়,
ঘর চাবি চশমা কৌটোরা
সবাই ঘেমে নেয়ে অস্থির।
এইবার সকল মুখোশকে জান্তব
গালিগালাজ দেবে এক প্রাগৈতিহাসিক রিকশাওয়ালা,
সকলে ভেবেছিল চাকাগুলো শূন্যের মতো, শূন্যের ভিতর ঘুরছে…
এই দক্ষিণের বাতাসে প্রাগৈতিহাসিক রিকশাওয়ালা
ক্ষেপে গেলে সকলে বুঝবে,
নিদাঘ আসছে..


শ্রাবণী গুপ্ত

চেতনে অবচেতনে কত ভাবনাই তো ঘোরাঘুরি করে। বয়স যত বাড়ে দর্শন বদলায়, বদলাতে থাকে। হঠাৎ একদিন ‘মৈত্রেয় জাতক’ যেন স্মৃতি থেকে উঠে এসে পাশে বসল। কখন যে লেখাগুলো হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না।

শ্রাবণী গুপ্ত


যে দূরত্ব অনতিক্রম্য
সেই পথ পার হয়ে, যাই, তোমার কাছেই যাই

দেখি নিভে গেছে আলো
রাতুল পায়ের ছাপ পড়ে আছে

শিয়রে বিশ্রাম লিখে;
তুমি গেছ অনন্তশয্যায়

ধীরে ধীরে নেমে আসি

পথ—সে কি ফিরে যেতে চায়!

আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে তবু দুঃখ
ফিরে যায়
যেন নিরুপায়।


যে জ্যোতি মুহুর্মুহু আমাতেই জ্বলে আর নেভে

তার কাছে হাত পাতি
গভীর গহন কালো হাত

দেখি তুমি উঠে এসে

বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো—
আমাকেই ছুঁয়েছ হঠাৎ।


কেন যে অন্তর জুড়ে—

এই-আলো এই-অন্ধকার!

ভাবি বিস্মরণে যাব,
স্মৃতি থেকে মুছে দেব পুনঃ পুনঃ যত অহংকার

আমাকে করেছে দাহ, পুড়িয়ে মেরেছে বারবার…


আলো-ছায়ায়, বিস্মরণে

পথ খুঁজি,

খুঁজে মরি,

এই যেন একমাত্র চাওয়া

যে পথে অনন্ত ছুঁয়ে
আমার একাকী আসা-যাওয়া।


.