বহির্বঙ্গের কবিতা
বহির্বঙ্গের কবিতা? এরকম বলা কি ঠিক? বাংলা ভাষায় লেখা যে-কোনও কবিতাই বাংলা কবিতা। এখানে আবার বঙ্গের ভিতর-বাহির কী? আসলে কবিতা রচনার স্থান নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বসবাসকারী বাঙালির কবিতা চর্চাকে বাংলা কবিতার কর্তাব্যক্তিরা অনেকটাই অগ্রাহ্য করেন। বড় অনুষ্ঠানে সাধারণত তাঁদের ডাকা হয় না। পুরস্কারের জন্য তাঁদের নাম বিবেচিত হয় না। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। অথচ দেখুন আমাদের সময়ের তিনজন কবি অর্ঘ্য দত্ত (মুম্বাই থাকেন), স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঙ্গালোর থাকেন), যীশু মিত্র (মুম্বাই থাকেন) কত সম্পন্ন কবিতা লেখেন! নিয়মিত কবিতার রেওয়াজ (পড়া ও লেখা) না করলে এমন কবিতা লেখা যায় না। বরং ভিন্ন ভাষার রাজ্যে বসবাস করে বাংলা কবিতা, বাংলা সংস্কৃতি চর্চা একটা কঠিন লড়াই। এই কবিরা বাংলা ভাষার বিশেষ যোদ্ধা। বিশেষ ভালবাসা অবশ্যই তাঁদের ন্যায্য পাওনা।
–বিভাস রায়চৌধুরী
অর্ঘ্য দত্তের কবিতা
দেবী
কবেই তো চলে গেছ, তাও
জলের ওপরে ভাসে খড়ের কঙ্কাল
জানি আবার ছোঁয়াবে মাটি, রঙ, শোলার মুকুট
দেবী সেজে অন্য কোনও প্রেমিকের বুক
ছুঁচ হয়ে ঢুকে করবে ফাল। কাল, নাহলে পরশু…
আবার পাঠাবে তাকে গুনে গুনে একশো আট চুমু
আদর লাগাবে কচি, শুদ্ধপ্রাণ প্রেমিকের চোখে
‘তুমি ছাড়া বাঁচব না হে’, মরা কান্না ইমোজির ঢঙে
তারপর, সাজানো নৈবেদ্য ফেলে ভেসে যাবে ফের…
পুজোয় এতই লোভ? …প্রেমে?
প্রতিবার ভাসানের পর তাই বুঝি বেঁচে ওঠো
পুরনো হৃদয় নিয়ে নতুন বিগ্রহে…
কবিতা
প্রতিটি বিশুদ্ধ কান্না বাস্তবিকই নিখুঁত কবিতা
ব্যথায় লুকোনো বীজ অঙ্কুরিত হলে
কোন বৃত্তে ঝরে জল, কত পর্বে বিভক্ত রোদন
হিসেব থাকে না তার, ছলকে ওঠে অমর্ত্যের বিভা
উপহাস করো! সেই সব
মগ্ন পংক্তি ছিঁড়ে করো রিভিউ দাখিল! আলোচনা?
জেনে রেখো, রোজ তবু লেখা হবে সহস্র কবিতা
শিমুল ব্যথার বীজ যতদিন ভাসবে হাওয়ায়…
আহত ঋতুর ঝর্ণা, অশ্রু অকপট
নির্মিত কাব্যের থেকে ঢের বেশি প্রকৃত কবিতা…
স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
মন
ফাঁকা জলের বোতল
উদাস তাকিয়েছে
এই যে ফাঁকা ও উদাস
তার ফাঁক গলে আরও ভাবনা
ঘড়ির কাঁটা ফাঁকি দিয়ে যায়
কবুতর জানলা মৃতগন্ধ ইত্যাদি শব্দেরা
কান খাড়া লোমশ শতাব্দী প্রাচীন
দৈত্যবিশেষ
আমার ভাবনার কাছে ঘর ও ঘরামি
স্বর ও ষড়যন্ত্র বোধ ও বোধি
জমি ছেড়ে দাঁড়িয়েছে
শীত
যখন জ্ঞান হয়নি তখন থেকেই এক যক্ষ
বুকের ভেতর সেঁধিয়েছিল
অপেক্ষা আর পাহারার কলসিটি
সেই-ই পুঁতে রাখে গোপনের মাটিতে
তারপর কাল গেছে সময় গেছে
একে অপরের হাত ধরে আমি আর যক্ষ
অপেক্ষা করে গেছি মৃত্যুফলের
আর এক শীতঋতু এপাশ ওপাশ করে
আমাদের ঘন’র শরীরে
শুয়ে আছে ফাটা রুক্ষ হয়ে
যীশু মিত্রের কবিতা
মুখচ্ছবি
সুখের চাওয়া
আকর্ষণীয়
দিন, মাস, বছর,,.
পল অনুপল।
মানুষের রঙ
সাদা,কালো
কিংবা ঈষৎ ।
উপচে পড়া ভিড় ।
জ্যামিতিক বোধ
মুখ প্রচ্ছদ
ছুটে চলা
এক বিপন্ন বিস্ময়।
নতুন গল্প
বীজ বোনে
উতলা হয়।
মুখচ্ছবি প্রস্ফুটিত।
সাদা কালো রাজপথে
দৃশ্যমান মুখে
ঘুমোতে চাই না
একলা বেঁচে থাকা…