You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৫৬ সংখ্যা
Feature painting: Chandan Mishra

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৫৬ সংখ্যা

–বিভাস রায়চৌধুরী


রাখী সরদার

রাখী সরদারের কবিতা

যুদ্ধ

একজোড়া পুরুষের পা আর একজোড়া নারীর পা পাশাপাশি

চাপ চাপ রক্তের মাঝে দাঁড়িয়ে;

দু’জোড়া পায়ের মাঝখানে একটি
লাঠির মাথায় বসে এক
বয়স্ক ঈগল।

নারী ও পুরুষটি পরস্পরকে
আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকা অবধি
ঈগলটি বসেই আছে।

ঈশ্বরী

ঠাকুরদালানে এখন ঈশ্বরী একা–
সকলের চোখ এড়িয়ে কমল বাউরীর
মেয়েটি মালা গাঁথছে

ওদিকে জবাবনে খুব হুলুস্থুল!
সন্ধিপুজোর ছাগশিশুটি বাঁধা ছিল এখানেই; কে যে তার দড়ি
খুলে দিল!

চারিদিকে চেঁচামেচি, খোঁজ খোঁজ…

এখন আকাশে কুচো কুচো তারা
ফুটেছে। কমল বাউরীর খোঁয়াড়ে
ডেকে ওঠে হারানো ছাগশাবকটি,
তার গলায় দুলছে টাটকা রক্তজবার মালা

দূর থেকে শোনা যাচ্ছে সন্ধিপুজোর
ঢাকের আওয়াজ, ঘন ঘন
উলুধ্বনি…

পদচিহ্ন

আমি
সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি

দাঁড়িয়ে থাকি

যেখান থেকে ফিরে গিয়েছে

তোমার দ্বিধাগ্রস্ত

পদচিহ্ন


সোমা দত্ত

সোমা দত্তের কবিতা

গাছ

ধুলোর উপরে পড়ে আছে গাছের কঙ্কাল
একদিন বর্ষার জলে ভিজে আমাদের দু’জনের সাথে সেও উঠেছিল কেঁপে–
ক্ষিপ্র স্রোতের টানে সমুদ্র ভেঙেছিল বালির পাহাড়।
তারপর জোয়ারের দিন শেষ হলে সমুদ্র পিছোয়–
আমরাও কি আর পুনর্জন্মের টানে মনে রেখেছি ব্যভিচার–

শুধু মনে রেখেছিল গাছ…

পাতা আর ডালের সংযোগে,
জন্ম দিয়েছিল নব্য মুকুল বীথিকার–

ভগবান

তোমার বানান থেকে অলৌকিক রাশিটি তুলে নাও
তোমার দুই পা আর হাত মানবিক হয়ে উঠুক– শরীর স্পষ্ট হোক
যৌনতা থাকুক
ভালবাসা, প্রেম আর গান সঞ্চারিত হোক স্বরে–
মানুষের সমস্ত রক্ত-মাংস আর হাড়ের মতো, ব্যথাপ্রবণ হোক তোমার শরীর–
খিদে বেঁচে থাকুক তোমার পাকস্থলীতে।

আমার সামনে আসনপিঁড়ি হয়ে বসো,
আরাম করে তোমার পা ছুঁয়ে নিতে দাও মন্ত্র
হাত ছুঁয়ে গ্রহণ করতে দাও আশীর্বাদ
ঠোঁট ছুঁয়ে চেনাও যৌনতা– নিতে দাও প্রাণের উদ্যোগ…

এরপর
মেনে নেব তুমি ভগবান!

অবস্থান

পশ্চিমদিকে তাকালেই দেখতে পাই
তোমার ডুবে যাওয়া
ঘরের ভিতরে নামে অন্ধকার!

দরজায় ছিটকিনি দিলে,
শুধু আমি আর আমি
ফিসফাস শব্দ হয় নীরবতার–

এইসব টুকটাক শব্দের মাঝে
বেঁচে থাকা পাখিটা বুকের ভিতরে নাচে…
বলে, আলো জ্বাল–

আলো জ্বালতেই দশদিকে জেগে ওঠে পৃথিবী–
স্পষ্ট হয় জীবনের শৃঙ্খল
তরুণ রেকাবে জাগে, গীতিকবিতার রাত
দেহলীন গুপ্তকথা ফুলে ওঠে আগুনের আঁচে–

দুধের পাত্র থেকে তুলে নিলে সর
দক্ষিণের জানলায় দেখি, স্তব্ধলোকে তুমি একা– উর্বর…


সুজন পণ্ডা

সুজন পণ্ডার কবিতা

বিষাদ হরকরা


আমি ঘুমোলে
ঘুমায় নক্ষত্রেরা, রাজপথ।
আমি হাত বাড়ালে
ভেঙে যায় ভোরের দরজা।

গাছে গাছে অরক্ষিত পুষ্পে পত্রে
নেমে আসে রোদ রং

তারপর আমার অরক্ষিত বুকে
কার আঙুল?
স্মৃতির মতো খেলা করে
সারাটি দিন

অতি প্রাচীন এই জ্যোৎস্নার নীচে…
কেউ… কারা হেঁটে ছুটে বেড়ায়,
বুকের ওপর টেনে নেয়
জোনাকি ভেজা মহাকাশ।

অতি প্রাচীন
কাঁসা রং এই জ্যোৎস্না

অনেক রাত্রে উত্তুরে হাওয়ায়
টুপ… টুপ… টুপ…

আলোয় আলোয়
ভরে যায় উঠোন, চিলছাত, অতীত

কিছুই থাকবে না…
নামধাম… এই নদী…।
শুকনো ঘাসের বনে…
মরে যাবে রোদ।
কিছুই থাকে না মুঠোয়…

অথচ পাতার কিনারে এসে
শিশিরের ফোঁটাটুকু
ফিরে কি তাকায় আবার?

কিছুই থাকে না
তবুও আবার
ভোর ভেসে যায় আলোর জোয়ারে