You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম, ১৪২ সংখ্যা

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম, ১৪২ সংখ্যা

মাসুদার রহমান

“নিধুয়া পাথারের ওপার থেকে এক-একটি বিকেল মন কেমন করা হাওয়া নিয়ে কাকে যেন খোঁজে। কাকে খোঁজে? সে তার নাম জানে না। তাই ধান ফসলের মাঠ ছুঁয়ে নিরন্তর তার বয়ে যাওয়া। বয়ে যাওয়ার ফাঁকেই যেন সে কত কিছু দেখে। মাঠের পাশে ছোট বাড়ি। ছনের ছাউনি। পাকঘরে ধোঁয়া উঠছে। পাটখড়ির বেড়া, শুকোতে দেওয়া ডুরে শাড়ি রোদ লেগে হাওয়া লেগে হেসে উঠছে বারবার। শিশুটি এই বিকেলবেলায় ঘরের দাওয়ায় পড়ায় ব্যস্ত; যা কিনা রাত্রিপাঠের বিকল্প। তাতে করে কেরোসিন কুপি না জ্বালিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় হল। আলপথে হেঁটে যাচ্ছে দূর গ্রামের ব‌উ। সঙ্গে লোকটি কে? শ্বশুর না স্বামী? বিভ্রম জাগে। কোথায় যেন কোকিল ডাকল, এবছরে এই প্রথম কোকিলের ডাক। তাহলে নিশ্চয় এ মাস ফাল্গুন হবে। পাতা ঝরছে গাছেদের। বট-পাকুড়ের পাতা ফেলবার প্রতিযোগিতায় মনে হয় ওই সব গাছেদের নীচে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ি মুখ আকাশের দিকে রেখে। আর গাছদের সমস্ত শাখাগুলো থেকে তাদের হলুদরাঙা হয়ে আসা পাতাগুলো এই শরীরের উপরে ঝরিয়ে দিক। যাতে করে সমস্ত শরীর পাতার আড়ালে ঢাকা পড়ে। তারপর শুকনো পাতার পরিবারে এই শরীরও একটি শুকনো পাতা। ঘূর্ণি নৃত্য করে! উড়ে উড়ে কাকে খোঁজে? কাকে যেন খোঁজে!”

ম্যাজিক টাইম

Painting: Paul Nash

দেয়াশলাই বাক্স খুলেছি- ভেতর থেকে
উড়ে গেল পাখি

গতরাতে ঝরে পড়া ফুলগুলো গাছে উঠে
পা দোলাচ্ছে

কী হচ্ছে এসব!

সন্ধ্যা ও কুয়াশার ভেতর নির্জন রাস্তায় সাইকেল আরোহী
তাঁর সিগারেটের আগুন থেকে আমার সিগারেট
জ্বালিয়ে নিয়েছি
তারপর জানতে চেয়েছি- কী হচ্ছে এসব!

কোনো উত্তর না করে লোকটি সাইকেল চালিয়ে
চাঁদে উঠে গেল

যুদ্ধদিনের কবিতা

Paul Nash

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা হলে- বটতলায় বসে
আড্ডা জমলো

পাশে ধানখেত- তার ওপাশে ভাটালের বিল
পাড়ে জেলানেস্কি সাহেবের মুরগিখামার
সেখান থেকে মোরগগুলো বারবার ডাক পাঠাচ্ছে
তা ঠিক যুদ্ধের না শান্তির!

চরাচর জুড়ে তীব্র হেমন্তের রোদ
আর সীমাহীন নীলাকাশ
ঝাঁকে ঝাঁকে ফংড়ি উড়ছে

ভ্লাদিমির আকাশের দিকে তাকালেন
বললেন- দেখো, আকাশ ছেয়ে গেছে যুদ্ধবিমানে

বিমান ল্যান্ড করে

Paul Nash

ঘাসবন থেকে ফড়িং উড়ে এসে খোঁপায় বসেছে

জানি- কেন ভুল করে…

বাগানের ভেতর দিয়ে টানা রাস্তা
সবুজ শেমিজ আর ওড়না উড়িয়ে হেঁটে আসছিলে
চমকে দেখেছি- যেন একটি গাছ হেঁটে আসছে

রানওয়ে ভেবে তোমার সিঁথিতে কোনো বোয়িং বিমান যদি
ল্যান্ড করে
মোটেও আশ্চর্য হব না

জাতীয় সড়ক যেখানে মুছে গেছে

Paul Nash

নির্জন মাঠের মধ্যে আমাদের জাতীয় সড়ক
ডুবে গেছে

আমার সবুজ সাইকেল ঘাসে মুখ গুঁজে রূপান্তর হল ঘাসে

ফেরাও হল না তাই যে কারণে, রোদ-শীতে ধান ফুটে
ছড়িয়ে রয়েছি খই
বরফের নীচে চাপা পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত ঠিকঠাক
কিন্তু কারও পাঠেও আসে না

অস্পষ্ট রেখার মতো নগর ও পাড়াগ্রাম
দূরে দূরে রাখাল ও গোধূলি উড়ছে


কবিতা আশ্রম থেকে প্রকাশিত এই কবির কাব্যগ্রন্থ :