You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৪৭ সংখ্যা

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৪৭ সংখ্যা

ঋজুরেখ চক্রবর্তী

ঋজুরেখ চক্রবর্তী

কে অতিস্বপ্নচর এই

প্রহর গড়িয়ে যায়, মন্দগতি, অন্ধকারে একা একা আর
মাঝেমাঝে ইদানীং রচনার অনুর্বর কালে
জেগে গিয়ে দেখি দূর আকাশে অনিদ্রা লেগে আছে
আমাদের যাবতীয় ব্যর্থতার মতো।

সাফল্য কে মেপে দেখে গর্হিত গর্বিত ইহলোকে!
ব্যর্থতাই পরিমাপযোগ্য আর শীতল সম্ভ্রান্ত,
ব্যর্থতাই আদি সর্বসম্মতির ঘোর সুলক্ষণ বলে জানি,
ব্যর্থতাই চিরযাপনীয়।

ব্যর্থতা সুন্দর, সৎ, দীপ্ত, শান্ত, সুকুমার, তবু
কেন এই সুচতুর নির্মাণের নিহিত রসদ ভেঙে ভেঙে
কোন আনন্দের মোহে মুগ্ধ অবিরাম ইতিকথা রচে চলা
জঙ্গম জড়ের মতো ভূতগ্রস্ত এক কোণে বসে!

নিশীথে নিষিদ্ধ স্বপ্নে, শিহরণে─প্রেয়সী, না কি সে মৃত্যু─
শিয়রে সহস্রকলা আসনভঙ্গিমাগুলি কার?


দিশারী মুখোপাধ্যায়

দিশারী মুখোপাধ্যায়

দহন

কোটি কেলভিনের আয়োজন করেছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম
ইউনিভার্সের মহল্লা জুড়ে ।
আগুন স্বয়ং সেখানে স্বাহাকে সঙ্গে নিয়ে
কীভাবে পুড়তে হয় তাই শিখতে গেছে ।
আমার সেখানে আমন্ত্রণ না থাকলেও
তুমি নিজেই সেখানে গেছ
যজ্ঞকুণ্ডগুলোকে দাহ্য করে তোলার দায়িত্ব নিয়ে ।

দশ বিশটা গ্যালাক্সি যেন তুমি
এক এক বেলায় ঘুরে নিচ্ছ পায়ে পায়ে হেঁটে,
কেলভিন সংসারের সেই তাপকে বরাভয় দিচ্ছ
শান্তিজল দিয়ে।

এদিকে এই পৃথিবীতে এক ভাঙা মাটির ঘরে
জ্বরের আগুনে পুড়ছি আমি ।


তৈমুর খান

তৈমুর খান

সৈনিকের ডায়েরি

আমার ঘোড়ার রং সাদা, জানালার রং সবুজ
আমার স্বপ্নের রং সোনালি রোদ্দুর
যতদূর যেতে পারি রোজ ততদূর যাই
রাতগুলি তুলে রাখি কালের জ্যোৎস্নায়

পুরনো বসন্তরা একে একে ফিরে এলে
আমিও নদীর কাছে যাই,
তরঙ্গে তরঙ্গে বাঁশি বাজে
সুরে সুরে সূর্য খুঁজে পাই

এই বোধ এখনো তরণি হতে জানে
এখনো স্বপ্নের জলে হৃদয় ভেজায়
অনুকূল প্রতিকূল দুই পাশে তীর
একপাশে সকাল হলে, অন্যপাশ আঁধার নামায়

বিকেলের পাখিদের ভিড়ে সে-ও আসে
আমার ঘোড়ার পাশে দাঁড়ালে তার ছায়া দেখি
জানালা খোলাই থাকে, শব্দই এখন তরবারি
কামনারা মেঘের পাহাড় থেকে আজও মারে উঁকি!


সব্যসাচী সরকার

সব্যসাচী সরকার

অহিফেন যুগ

তুমি চুপ করে আছো এই কি চেয়েছিলে
কু-কথার বদলায়, চাওনি
বলা হোক কিছু সাদা-কালো

থেমে আছো সাহস শেষ?
ভুল কে, বলা ভুল। স্বার্থপর যদি হবে
বলো অভিনয়ে জেগে আছো বিলকুল।

দেখছেন তো, বাসট্রামট্রেন।
সবাই চুপ করে আছে, গোপন স্বার্থ
জানে সবাই। মুখ খুললে এক থাপ্পড়ে
শিখিয়ে দেবে
কে হে তুই, কেন তুই।

এত ভয় , এত ভয়। কী করবে গায়ে মেখে
তুমি না চিরজীবী ,ভাষাবিপ্লবী
ভয় ভয় শিখে গুটিয়ে আছো
বিষহীন সরীসৃপ, তাই ঠিক?

ভয় পাচ্ছো, পাও। দল গড়ো
ভীতস্বার্থের বিপুল সংসার
ডেকো না ভুলেও, ভিখিরিকে
ওরা বিরহী,
ভয় পায়নি কক্ষনো।

ছাড়ো, অহংকার। থাকো ভিতু হয়ে
ছাই হতে থাকা সাহস দেখে শেখো

ও কে? ওকে চেনো?

বাসের হাতল ধরে এইসব কথা
শুনছিল লোকজন
সাহসের কথা যদি কেউ গায় কীর্তন।
রাক্ষসের হাত থেকে মুদ্রা নেওয়া
ভিখিরিও বলে ওঠে
তা বেশ। বলো ভোলা মন!

কী দেখছেন রোজ?
সংসারী হতে চেয়ে মেয়েটির কেউ নেই
তুলে নিয়ে গেছে ত্রিশূলের লোকজন
স্বাস্থ্যটাস্থ্য ভাল, বয়স ঠিকঠাক, আজ
শকুন বা হায়না চিনতে না পেরে
বলেছিল
আমাকে ধীরে ধীরে খাস।

কী ভাবছেন, চুপচাপ থাকাই তো ভাল
কত লোক আছে সংসারে।
ছদ্মবেশী সাহসী হয়ে
যে যেখানে পারে করে খাক

এইবার সত্যিটা বলি
সাহস আমারও আছে খুব
বারুদের ঘরের মতো, একদিন সব শোধবোধ

জনে জনে সেই বার্তা যাক।


শর্বরী চৌধুরী

শর্বরী চৌধুরী

তিনটি কবিতা

অমৃতের গান

সব আসা আসা নয়
কিছু আসার মধ্যে যাওয়া থাকে
একা যখন বসে থাকি নির্জন দুপুরে,
ঘুঘুর ডাক জানিয়ে দেয় বুকের মধ্যে
সবকিছু বয়ে বেড়ানো ভাল নয়।
তাই গাছের সঙ্গে কথা বলি
ভাগ করে নিই আমার আনন্দ, বিষাদ
এসেছিলাম একদিন, যাবার সময় হয়েছে।
যেতে যেতে পৃথিবীকে শুনিয়ে যেতে চাই অমৃতের গান।

বিশ্রাম

তুমি এক তেপান্তরের মাঠ
তোমার ওপর দিয়ে হেঁটে যাই
শ্রান্তিহীন পথিকের মতো।
গোধূলির আলো এসে জানায় দিন
শেষ হতে চলেছে।
আমার হাঁটা শেষ হয় না তখনও
আমি চলতে থাকি নিবিড় তমসার মাঝেও,
হাঁটতে থাকি আসন্ন বিশ্রামের আশা বুকে নিয়ে।

ভাল হত

চারপাশে কেউ নেই
অথচ থাকলে ভাল হত
ঝরা পাতার দুঃখ বোঝার মতো
মন থাকে না সবার।
থাকলে ভাল হত।