You are currently viewing সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৮৪ সংখ্যা
ঋণ : অ্যানসেলম কিফার

সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৮৪ সংখ্যা

একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসে ভাষাশহিদদের পায়ে আমাদের প্রণামফুল হিসেবে নিবেদন করলাম নতুন প্রজন্মের কয়েকজন কবির কবিতা।

…কবিতা আশ্রম

ঋণ : অ্যানসেলম কিফার

রুমা তপাদার

বাংলা বলব না

ধরো, দুপুরের শেষ দিকে এসে মনে হল চলে যাবে।
যাবে।
আমি হাত জোড় করে বলব যেও না আমাকে ছেড়ে।
তুমি যাবে। কিছু না বলেই চলে যাবে।
তারপর কোথাও আর দেখা হবে না তোমার সঙ্গে
তুমি রাজি হবে না সম্পর্ক রাখতে আর
আমি বাংলা ভাষা ছেড়ে চলে যাব
ভুলে যাব একুশে ফেব্রুয়ারির কথা
তার চেয়ে ভি ডে করব ফেব্রুয়ারিতে
আমার কাজের ক্ষেত্র নিয়ে দেদার কাটিয়ে দেব
একদিন অফিস শেষ হবে
সব কাজ নিশ্চিত গোছানো হয়ে যাবে
তাও বাংলা বলব না
আমি ইংরেজিতে বলব
ম্যান্ডেরিনেও বলবো
হিন্দির উপভাষায় বলব
এমনকি ভারতবর্ষের সমস্ত উপভাষাতেও বলব
ভালবেসেছিলাম বলেই অন্যভাষায় কবিতা লিখিনি।

দিব্যেন্দু ঘোষ

প্রেমজল

এই সময়ের পেটে লাথি মেরে
এখনই বেরিয়ে যাব
এখানে ভালবাসা এক প্রকার চুক্তি
একসঙ্গে থাকা মানে
নিজেদের মধ্যে গোপন ব্যবসা

এইসময়ের পেটে এখনই লাথি মেরে
বেরিয়ে যেতে না পারলে
খুব দেরি হয়ে যাবে

চোখের সামনে নদীর মৃত্যু
জঙ্গলে কৃত্রিম দাবানল
দগ্ধ হরিণের করুণ চিৎকার
ভূমিকম্প হয়নি অথচ নগরে
বহুতল ভেঙে পড়ার শব্দ

এসবের মাঝখানে আর একমুহূর্ত
থাকবার ইচ্ছে নেই আমার
এখানে শুধু উল্লাস আর উল্লাসের
বিপরীতে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর্তনাদ

এই সময়টাকে চুরি করে
গোগ্রাসে গিলছে নকল কবির দল

প্রজাপতি, এই সময়ের পেটে লাথি মেরে
এখনই বেরিয়ে যাওয়ার কল্পনা করা ছাড়া
আমার হাতে আর কোনও অস্ত্র নেই

এখানে প্রেমিক সত্যিকারের অসহায়
তাঁকে এক ফোঁটা প্রেমজলের জন্য
ভিখিরির মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়

অমর্ত্য বিশ্বাস

নিঃসঙ্গতায়

কিছু যদি না চায় এখন
তবে তো বৃথাই আয়োজন সব
দ্রুতগামী ঘুমের নামে ভ্রম জেগে ওঠে
প্রতিটি দালানে

আমি চেয়েছি বরাবরের মতো
কিছু লিখে যেতে

অসংখ্য আলোর কুচি
যা আমার ছিল না কোন‌ওদিনই
তাদের দিকে ব্যর্থ ব্যবধান রেখে গেছি

আমি ঠিক আগের মতোই আছি
মেঘের আড়ালে নিজেকে দেখি
নিঃসঙ্গতায়

বাদামি রঙের হাওয়ায় শুকিয়ে নিলাম
শিশুর জন্ম ব্যথা, টাঙানো দেখেছি
খালের পুব পাশের ছাতিম গাছের ডালে।
মা বলে বড্ড বেহায়া আমি
কে জানে, এমন জাল বুনেছি, যে
শরীর থেকে ছিঁড়ে নিয়েছি হরিণের নরম মাংস
এখন বুঝি সেই ঘ্রাণ
জেলেনৌকায় ভাত ফুটছে দেখে
খানিক কচলিয়ে নেওয়া
শতাব্দীর প্রাচীন রন্ধনশিল্প

এই শুকতারা সায়াহ্নে
কাকে শোনাব অভিযোগ?
আমার অস্থির সময়ের গান

যে মেয়েটি ক্ষীণদেহ
অতিদুর্বল শুয়ে আছে রোগশয্যায়
শয্যাপার্শ্বে নিভু নিভু আলো
তাকে মনে হয়
আমারই অসুখনির্মিত প্রতিচ্ছায়া

জেগে আছে দুঃস্বপ্ন পান করে

ইচ্ছে করে তাকে দিই
সংবেদনশীলতা;

হত্যাদৃশ্যে চাঁদের উপস্থিতির
হৃদয় থেকে খুলে তার শিয়রে
রাখি উন্মুক্ত প্রান্তর
ক্ষতস্থানে এঁকে দিই জোছনাচন্দন
কানে কানে বলি, ‘সুস্থ হও
সহস্র আয়ু বেঁচে থাকো আমার উপশমে…’

এইখানে, এই উঠোনে একটা তুলসীমঞ্চের বড় প্রয়োজন।
তাকে আনো, এনে পুঁতে দাও ঠিক মাঝখানটিতে।
শূন্য মাঠে একটা বাড়ি গড়ে না উঠলে যে বাড়তি 
                                  ভূমি উঠোন হয়ে ওঠে না।
অর্থাৎ এখানে ঘর আছে। বধূ না এলে কে 
                                  দেবে পাণি ভরে জল? 
বধূ এল ধ্রুব সত্যে গাছটির আদরে।


দিন যায়, কাল যায়, যায় মহাকাল…।


তুলসীপত্র ফুটছে, অঙ্কে ফুটেছে মঞ্জরী।
কারও কারও আঁচলের হাত জানালো প্রণাম।
ইয়াকুব পাতার রসে কণ্ঠ ভিজিয়ে যায়।


বধূ বৃদ্ধ হল, নাতি-নাতনি এল,
তারাদের বেড়ে গেল অনন্ত বয়স।
একসময় এই ভিটে সিক্ত হল, রইল
পত্র-পুষ্প-বৃক্ষ সন্তানেরা। 


ঘর ভেঙে গেল, ভেঙে গেল রান্নাঘর!
জঙ্গলে মিশেছে বাড়ি, জঙ্গল গভীর হল।
আর, বনের ছায়ায় সেই তুলসীগাছ 
         প্রখর সুবাসে হয়ে উঠেছে বনতুলসী।