কবি নির্মল হালদারের কবিতা নিয়ে কিছু বলার যোগ্যতা নেই আমার, আমাদের। কিন্তু আমরা মনে করি তিনি যে জীবনযাপন করেন, সেটাই একজন একশো শতাংশ কবির হওয়া উচিত। গণমানুষের সঙ্গে মিশে থাকা। কবিতা লেখার বিপন্নতা নিয়ে বাঁচা। কবি হিসেবে নিজেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ দেখানোর তাগিদে ক্ষমতার বা প্রতিষ্ঠানের পা না চাটা।
নির্মল হালদারের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর কবিতাই আমাদের অভিবাদনের আকাশমুখো অস্ত্র বা পুজোর ফুল।
বিভাস রায়চৌধুরী
কবিতা আশ্রম
নির্মল হালদারের কবিতা
বাথানের মা
১
পাহাড়ের এখান-সেখান ছাগল গোরু
পাহাড়ের এখান-সেখান
ছোট বড় গাছ
পাখিও উড়ে বেড়ায়
সাপও আছে পাহাড়ের গর্তে।
একটা ছাগল নীচে নামতে নামতে
আষাঢ়ের মেঘের দিকে চেয়ে
দুটো বাচ্চা বিয়াল
পাহাড়ের কোল মায়ের কোল
বৃষ্টিতে ভিজে উঠল
আনন্দে।
২
মেঘ নামছে থরে থরে
আড়াল হয়ে যাবে বাথানের ঘাস
গোরু ছাগল কি মেঘ গিলবে?
আজ কি তবে ঈশ্বরের এই দান
মেঘ চেটেপুটে খাবে?
৩
মাথার কাপড় ছেঁড়া ছাতাও টুটা-ফুটা
সারা গা থেকে জল ঝরে
মুখেও ঢুকে পড়ে, পেটেও ঢুকে পড়ে,
বৃষ্টির বীজ।
৪
সবই পুব সর্বত্র উদয়
মাটিতে উদয় গাছ পালাতে উদয়
বাথানেও উদয়
গাই-গোরুর সঙ্গে চরে বেড়াবে
সবই পুব সর্বত্র উদয়
বাথানের মায়ের কপালে সূর্যোদয়।
৫
বাগাল তো গোরু চড়ায়
বাগালকে চড়ায় পোড়ামুখী রাধিকা
রাধা লো রাধা, বাগাল কি গুঁতোয়?
লেজের ঝাপটায় কি পিরিতের স্বাদ?
৬
মুদি বউয়ের মাথায় ঘাসের বোঝা
পিছন থেকে একটা গোরু
টানতে টানতে মাটিতে নামায়
পোড়ামুখো গোরু
আমার গোরুকে খাওয়াব কী রে?
মুদি বউয়ের চেঁচামেচিতে
আরও কয়েকটা গোরু এসে
ঘাস চিবোতে থাকে
কচি ঘাস সবুজ ঘাস
কার খাদ্য কে খায়?
বসুন্ধরা হাসে।
৭
ষাঁড়ে-ষাঁড়ে লড়াই
বসুন্ধরা কাঁপে
শিব তো আর কাছে নেই
পার্বতীও নেই
আছে শুধু বাথানের মা
বাপধন বাছাধন করে
লড়াইয়ের কাছে ছেড়ে দেবে একটা গাই
দু’টি ষাঁড় একই সঙ্গে গাইয়ের গা চাটবে।
৮
ও লো ও ছুঁড়ি,
কী করতে মহুল তলায়?
মহুল পাড়বি?
মহুল না পেড়ে
পাতে মুড়ে মহুল গন্ধ নিয়ে যা
গন্ধে গন্ধে বশ হবে
তোর পালিয়ে যাওয়া নাগর
গন্ধে গন্ধে বশ হবে তোর গোরুটাও
দড়ি ছিঁড়ে পালাবে না।
৯
উঠানে পাতা আছে একটি খাট
ছায়া খুঁজতে খুঁজতে একটি ছাগলছানা
খাটের তলায়।
কালো ছাগলছানার সঙ্গে আছে
কালো কালো পিঁপড়ে
নিশ্বাসে নিশ্বাস আলো হয়ে একটি ভুবন।
১০
কাদের ষাঁড় কাদের ষাঁড়?
ও বউ দেখ লো
ভয় করছে আমার খামারের খড় যদি খেয়ে ফেলে!
কোথা থেকে এল?
ও বউ, কোথায় আছিস?
শুনতে পাচ্ছিস কোথাও ডমরু বাজছে।
১১
রাস্তায় গোরু দেখলে কপালে হাত ঠেকায়
গাছতলায় সিঁদুর লেপা পাথরের কাছেও
গড় করে।
বুড়িরা যায় শিবের থানে
পাথরের ষাঁড়ের পায়ে জল ঢালে।
১২
বুনো খেজুর মাটিতে পড়ে
গোরু খেলেও কুকুর তো ছোঁয় না
গাছটি একা দাঁড়িয়ে আছে।
গোরুকে দেখে গোরু আসে
আর আসে ছোট ছেলেমেয়েরা
ঝুড়িতে ভরে খেজুরের বুনো গন্ধ
বুড়ি ঠাকুমা বাজারে বিকোবে।
১৩
বাদল করেছে খুব
মেঘের ডরে পাখিরা পালাচ্ছে
গাছপালা জড়োসড়ো
সকালবেলা চারপাশ চুপচাপ
গোয়ালের চালা ভেঙে গেছে
কাল রাতের জলে ভিজে গেছে গোরু
বড়কার বাপের কাঁথাও ভেজা ভেজা
কুকুরটাও ঢুকে গেছে কামালশালের চালে।
১৪
ভিজছে খামারের খড়
গোরু-বাছুর ছুঁয়েও দেখবে না
কী খাওয়াবি রে চণ্ডী?
তোর তো গতর নাই ঘাস কেটে আনবি
তোর দু’টা বেটাও তো ময়ূরের সঙ্গে নাচছে
মেঘ দেখছে ময়ূরের সঙ্গে উড়ে উড়ে।
মেঘ দেখছে ময়ূরের সঙ্গে উড়ে উড়ে।