সাপ্তাহিক কবিতা আশ্রম ১৭৬ সংখ্যা
প্রকৃত কবিতা ঝাঁকুনি দেয়। সম্মোহিত করে। আমাদের চেতনায় গ্রামোফোনের পিনের মতো দাগ কাটে । পৃথা চট্টোপাধ্যায় এই সম্মোহন বিদ্যা যথার্থই জানেন। জানলে সরল সরলবর্গীয় বাঁশের বাঁশিই যথেষ্ট।
প্রকৃত কবিতা ঝাঁকুনি দেয়। সম্মোহিত করে। আমাদের চেতনায় গ্রামোফোনের পিনের মতো দাগ কাটে । পৃথা চট্টোপাধ্যায় এই সম্মোহন বিদ্যা যথার্থই জানেন। জানলে সরল সরলবর্গীয় বাঁশের বাঁশিই যথেষ্ট।
সুনীল সোনা নব্বই দশকের কবি। বর্তমানে বনগাঁয় সীমান্তগ্রাম রামচন্দ্রপুরে কৃষিজমি, বিল, কবিতা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে তাঁর বাস। ওঁর বাড়ি থেকে কয়েকশো পা দূরেই বাংলাদেশের মাটি। সুনীল সোনা কৃষক। ধানখেতের মাঝখানে তৈরি করা মাচাতে বসেই সে প্রধানত লেখালেখি করে। ভীষণ লাজুক কবি সুনীল সোনা। তিনি ছবিও আঁকতে পারেন ভাল। কবির প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পাখিদের বাংলাখাতা'। যা নব্বইয়ের একটি অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ। কবি ও কৃষক সুনীল সোনার কবিতায় ভেসে আসে ধানের সুবাস ও কৃষি-জীবনের বিপন্নতার কথা।
তাপস মাল শূন্য দশকের কবি। বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের গুড়াছান্দা গ্রামে তার জন্ম। গ্রামজীবনের অকৃত্রিম চিত্রকল্পের মধ্যে দিয়ে তাপস খুঁজে চলেছেন ইশ্বরের স্বরূপ, মহাজগতের ইশারা । মৃদুভাষী এবং গভীর কবিতাগুলো মুহূর্তের মধ্যে একরকমের নস্টালজিয়ায় আছন্ন করে ।
ঋজুরেখ চক্রবর্তী বিশিষ্ট কবি। হুজুগে সময় তাঁকে কখনও তরল করেনি। তাঁর কবিতায় ধ্যানের চিহ্ন লেগে থাকে সব সময়। উপরের হাওয়া-লাগা চপল স্রোতে নয়, গভীরে প্রবাহিত তাঁর কবিতা। তাঁর সদ্য লেখা একটি দীর্ঘকবিতা এই সংখ্যায় প্রকাশিত হল। সে-কবিতা সম্পর্কে স্বয়ং কবি বলেছেন, “যে বয়সে পৌঁছেছি, ঋতুচক্রের রূপক আশ্রয় করে একে হয়তো হেমন্তকাল বলা চলে আমার মরজীবনের। ঋতুচক্রের মতো জীবনচক্রে তো আবর্তন থাকে না কোনও, একমুখী নশ্বর এর অভিযাত্রা; এই অনিবার্যতার অভিমান থেকেই গড়ে ওঠা এ এলিজির। গড়ে ওঠা, বা, আসলে, হয়ে ওঠা। এগারো দিন ধরে এক প্রলম্বিত ঘোরে ছিলাম।”
কালো পিচরাস্তার ধারে অব্যবহৃত শিশু পায়ের কয়েক জোড়া নতুন জুতো একটা ছেঁড়া বস্তা কাঁধে কোথা থেকে ভবা পাগলা এসে জোটে আর হাসতে হাসতে সেগুলো তুলে নিয়ে যায়
একদিন ঝমঝম বৃষ্টির ভিতর জন্ম হয়েছিল এই অরণ্যের ডাল পালায় বড় হচ্ছে কৃষ্ণ কালো শাবক, পাহাড়ি বাঁকা রাস্তা বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে চায় পথের বাঁকে ভেসে আসে নুড়ির রিনিঝিনি মেয়েলি ঝর্না জলের ছোঁয়ায় ধস নামছে যখন হুড়মুড়িয়ে ক্ষয়িষ্ণু মাটিতে জীবন আঁকড়ে ধরে আছে শাল, কুরকুট তবুও নতুন পাতা আসবে বসন্তে বেতলা আমার বুক বুকেই হবে বৃক্ষ রোপন
কোচবিহারের দু’জন কবির কবিতা আমাদের হয়ে সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন কবি সুবীর সরকার। অনৈতা রক্ষিত ও ব্রততী দাসের তিনটি করে কবিতা পাঠকের দরবারে পেশ করা হল। কবিতা ধুয়ে মুছে সাফ করুক অপসংস্কৃতি।
পুরুলিয়া জেলার এক গ্রামের যুবক গণেশ মারান্ডি। পেশায় স্কুলশিক্ষক। সাঁওতালি ভাষায় কবিতা, গল্প এবং ছোটদের গল্প লেখেন। সাঁওতালি ভাষায় লেখা ছোটদের ছড়া বা কবিতার বই ‘হপন মাই’-এর জন্য ২০২২ সালে পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। সাঁওতালি ভাষায় একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেন তিনি। পত্রিকার নাম ‘সারজম উমুল’। গণেশ মারান্ডি সাঁওতালি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও কবিতা চর্চা করেন। এবারের সংখ্যায় প্রকাশ করা হল বাংলা ভাষায় লেখা তাঁর পাঁচটি কবিতা।
বাংলা কবিতার ভুবন বিস্তৃত--এই সত্য উপলব্ধি করলে পাঠককে সন্ধানী হতে হবে। কবিতার ভুবন একক সংগীত নয়।পরিব্রাজকের মতো সন্ধান করতে হবে, তা না হলে কত কত বিচিত্র ঝরনা অনাবিষ্কৃত রয়ে যাবে, অপার সৌন্দর্য নিয়ে হারিয়ে যাবে।
কবিতা একটি প্রবাহ। জীবনের মতো। আকাশচূড়ার গা বেয়ে নামে। নানা খাতে, নানান ধারায়। রসসিক্ত করে মাটিকে। সবুজ হয় প্রকৃতি। তারপর এই সব ঝরনা মিশে যায় মহাসমুদ্রে—মহাপ্রবাহে। আজকের তরুণ সেই মহাপ্রবাহের অংশ। ধূসর এই পৃথিবীতে আরও কবিতা চাই। কবিতা পাপনাশক। অন্ধকারে প্রদীপের পরিচর্যা করছে তরুণ কবিতারা।